১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্মম গণহত্যা চালায়। এই হত্যাকাণ্ডে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে এই রাতটিকে ‘কালো রাত’ বা ‘কালরাত্রি’ নামে পরিচিত।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে ২৫ মার্চ রাতে একটি অভিযান চালায়। এ অভিযানের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক, মিরপুর রোড, জগন্নাথ হল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে হামলা চালায়।
এছাড়া, একই রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পাক সেনাবাহিনী। হিন্দুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
এই ঘটনার প্রভাব:
২৫ মার্চের গণহত্যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করে। পাকিস্তানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এ অঞ্চলের মানুষ। ঘোষণা করা হয় স্বাধীনতা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হয় সশস্ত্র যুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের ভূমিকা:
পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ অঞ্চলের মানুষের ওপর নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করতে থাকলে লাখ লাখ মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত সরকার তাদের আশ্রয় ও খাদ্য সরবরাহ করেন। এছাড়া, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য সাতটি কেন্দ্র স্থাপন, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ এবং অর্থ সরবরাহ করে ভারত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের সমর্থন তৈরিতে কাজ করে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দেয় ভারত। সর্বশেষ যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মিত্রবাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যৌথ যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করে।
Leave a Reply