1. [email protected] : মো: সরোয়ার সরদার : মো: সরোয়ার সরদার
  2. [email protected] : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক
  3. [email protected] : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি
  4. [email protected] : Sadak Mostafa : Sadak Mostafa
  5. [email protected] : বিশেষ প্রতিনিধি : বিশেষ প্রতিনিধি
বেইলি রোড ট্রাজেডি: সাংবাদিকের ডায়েরিতে ঢামেক | ঢাকা আওয়ার
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন

বেইলি রোড ট্রাজেডি: সাংবাদিকের ডায়েরিতে ঢামেক

শাখাওয়াত প্রিন্স
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪
  • ৬০ সময় দর্শন
বেইলি রোডে বহুতল ভবনে আগুনের ঘটনার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে। ছবি: সংগৃহীত

ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন সাংবাদিকরা। অভিজ্ঞতার সামান্য অংশই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব হয়। বাকি কথার জায়গা হয় সাংবাদিকের ব্যক্তিগত ডায়েরিতে, স্মৃতিতে। উপরের লেখাটি দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড -এর স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শাখাওয়াত প্রিন্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ব্যক্তিগত আইডিতে শেয়ার করেছিলেন। তার অনুমতিতে লেখাটি ঢাকা আওয়ার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

বেইলি রোড ট্রাজেডি, সাংবাদিক হিসেবে মৃত স্বজনদের আঘাত খেয়েও যে কারণে চুপসে গেলাম!

রাত তখন দুইটা ত্রিশ, আমাদের চিফ রিপোর্টার নয়ন ভাইয়ের ফোন কল, ‘প্রিন্স এখনই যেতে হবে ঢাকা মেডিকেলে’। বললাম, ‘ভাই জাস্ট ১৫ মিনিট, আসছি’। মালিবাগ থেকে মোটরসাইকেলে ঢামেক (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) পৌঁছলাম মাত্র ২০ /২২ মিনিটের মধ্যে।

তখন ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনের জায়গার পুরোটা জুড়ে শত শত মানুষের জটলা। হঠাৎ হঠাৎ এদিক সেদিক কান্নার শব্দ, স্বজনদের আহাজারি কিন্তু রিপোর্টার ও ক্যামেরা ম্যানদের মধ্যে কিছুটা ভীতি লক্ষ্য করলাম, কেউ কেউ ছবি তুলতে চেয়েও ভয়ে তুলছেন না। স্বজনদের কেউ কেউ সাংবাদিকদের দিকে লক্ষ্য করে বলছেন, ‘একদম মেরে ফেলব’। আমি কিছুটা হকচকিয়ে তাকিয়ে রইলাম, কেন মিডিয়ার সঙ্গে এমন আচরণ, এমন প্রশ্ন আমার! কারণ অর্থনৈতিক বিষয় ছাড়া রিপোর্টিং মাঠের অভিজ্ঞতা খুবই কম (আমার)। আমাদের এক কলিগ এসে বললেন, ‘বুঝেন এমন ট্রাজিডি কাভারেজ কতটা কঠিন।’

আশিক আহমেদ পাগলের মতো চিৎকার করছে, তার পাশের স্বজনরা তাকে বারবার বোঝাচ্ছেন, এখানকার চিকিৎসাই হবে। তিনি বলছেন, হবে না। তখন পর্যন্ত তাকে তার স্বজনরা জানিয়েছেন, তার ছোট ছেলে মারা গেছেন, স্ত্রী ও বড় ছেলে এখনো বেঁচে আছেন।
আশিকের স্ত্রী নাজিয়া, তার চার ও ছয় বছরের দুই শিশুকে নিয়ে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে যান। আগুনে তাদের তিনজনই ঘটনাস্থলে মারা যান।

নাজিয়ার ভাই (২৮) ছদ্মনাম মুনির, তার সঙ্গে ২০/২৫ জন যুবক। মুনির কিছুক্ষণ পর পর চিৎকার দিয়ে বলছেন, ‘মামা তোমরা আমাকে ছেড়ে কিভাবে চলে গেলে?’, পাশে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পরছেন, চিৎকার দিয়ে বলছেন, ‘ওদের বাবা-মায়ের চেয়ে আমি আদোর বেশি করতাম, ওরা আমার সঙ্গে রাতে ঘুমাতো।’

এদিকে আশিক আহমেদ তার এক বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে বলছেন, ‘সামিট গ্রুপের মাধ্যমে একটা এয়ার বাস ম্যানেজ করো, আমার ছেলে ও স্ত্রীকে বাহিরে নিয়ে যাব, তারা না বাঁচলে আমিও… আমি বাঁচতে পারব না।’
আশিকের চিৎকারের শব্দ আমার ভেতরটাকেও নাড়িয়ে দিল, একটু তার কাছাকাছি হতে চাইলাম। আমার হাতে তখন মোবাইল, যদিও কোন ছবি কিংবা ভিডিও করা হচ্ছে না, এমন সময় এক মেয়ে (২৫-২৭) আমার মুখে আঘাত করতে তেড়ে আসলো, আমি বললাম, ‘ছবি তুলিনি’, সে কথা না শুনেই আমার চোয়ালে আঘাত করে বসলো। আমিও হকচকিয়ে গেলাম, এমন সময় তাদের স্বজনদের একজন এসে আমার কাছে ক্ষমা চাইলেন। বললেন, ‘ভাই বোঝেন তো, একই পরিবারের তিনজন মারা গেছে’, আমি সহজেই নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলাম। পরে আমার চিফ রিপোর্টারকে বললাম, ‘ভাই মেয়েটির মানসিক বিষণ্ণতা কেটে গেলে আমাকে আঘাতের বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয়ই আফসোস করবে।’

রাত তখন সাড়ে চারটা কিংবা পৌনে পাঁচটা, ঢামেকের কিছু নার্স ও কর্মকর্তা যাদের স্বজন মারা গেছেন তাদের এনআইডি দেখে লিস্ট করছেন, এখান থেকেই স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করবে। ঢামেকের ভিতরে জরুরি বিভাগের পাশের একটা গলিতে কয়েকজন স্বজনের পরিবার হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার চেচামেচি করে কান্না করছে। আব্দুল কুদ্দুস (৪৫) নামে এক ব্যাক্তিকে কয়েকজন জড়াজড়ি করে নিয়ে আসছেন। তিনি অন্যান্য স্বজনদের কাছে এসে এমন চিৎকার দিলেন, যেন আকাশ বাতাস ভাড়ি হয়ে যাচ্ছে।

তিনি স্বজনদের জড়িয়ে ধরে বলছেন, ‘মেয়াটা আমাকে শেষবারের মতো কল দিয়ে বলছে, ‘‘বাবা আমাকে বাঁচান, আমি আটকে পড়েছি। এরপরেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। আমি সোনাটাকে এখনো কল দিয়ে যাচ্ছি, কল আর ঢুকছে না।”

‘নিমু তার মৃত্যুর সময় বলছে, বাবা তুমি আমাকে বাঁচাও বাঁচাও’ তার কথাগুলো মোবাইলে টাইপ করছি, এরই মধ্যেই আমার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি বেরিয়ে এলো। চারপাশে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললাম, মনে মনে ভাবলাম, সাংবাদিকদের এতো ইমোশনাল হওয়া যাবে না।

অফিসের চাহিদা অনুযায়ী একদিন পরে ঘটনাস্থলের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে হচ্ছে। লেখার সময় ঢাকা এয়ারপোর্টের উদ্দেশে কয়েকজন সাংবাদিক গাড়িতে যাচ্ছি, এমন সময়েও নিমু বাবার চিৎকারের কথা মনে পড়ে গোপনে দু ফোঁটা চোখের পানি মুছে ফেললাম।
গত আট মাস আগে আমার পরিবারে এক ফুটফুটে ছেলে সন্তান আসে। ২৮ বছর বয়সে বাবা হয়ে গেলাম। এই কিছুদিনেই সন্তানদের প্রতি বাবার কি ভালোবাসা, হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। সেই থেকেই বুঝলাম, নিমুর বাবা কতটা ভারাক্রান্ত।

নিমু রাজধানীর সিটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রী। সে তার খালাতো বোন আলিশা ও রিয়ার সঙ্গে রেস্টুরেন্টে খেতে আসে গতকাল রাত নয়টার দিকে। তাদের সঙ্গে পাশের বাসার তিন বান্ধবীও এসেছে। সেসহ মোট ছয়জনই মারা গেছেন, স্বজনরা জানিয়েছেন। এরইমধ্যে ফজরের আজান হয়ে গেল। চিফ রিপোর্টারকে তার দিলু রোডের বাসায় নামিয়ে, আমি মালিবাগের বাসায় পৌঁছালাম।

এর আগে রাজধানী চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়ও স্বজনদের আহাজারি দেখার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে চাই, প্রত্যেকটি মানুষের জীবনযাপনের শতভাগ নিরাপত্তা। আর বিশেষ করে, বাসা মালিকদের প্রতি অনুরোধ, আপনাদের ছাদের দরজাটা দয়া করে তালাবদ্ধ রাখবেন না। অন্তত কঠিন দুর্ভোগের সময় যেন মানুষ ছাদে গিয়ে অন্য বাসার ছাদে যেতে পারে, কিংবা নিরাপদে বাঁচতে পারে।

সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *