কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে বসবাস করতেন আনসার আলী। এক ছেলে দুই মেয়ে সহ পাঁচ জনের সুখের সংসার ছিল তার। বাপ-দাদার ভিটে মাটি আকড়ে ধরে ইসলামপুর গ্রামে কেটেছে তার প্রায় ৬০ বছর। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদী, খাল-বিল, ফসলি মাঠ সবই তার আপন। কিন্তু কে জানতো ৬০টি বছরের চেনা নদী একদিন সব কেড়ে নেবে?
নদী ভাঙনে বসত ভিটা এমনকি কৃষি জমিও বিলিন হয়ে গেল আনসার আলীর। তিনি হয়ে গেলেন নিঃস্ব। পরিবারসহ হলেন গৃহহীন, শুরু হলো খোলা আকাশের নিচে অন্যের জায়গায় বসবাস। এরপরও গ্রাম ছেড়ে কোথাও যেতে চাননি তিনি। কিছুদিন এভাবে চলতে পারলেও শেষ পর্যন্ত পরিবেশ ও বাস্তবতার কাছে হার মানতে হয়েছে। খাবার নেই, পানি নেই, নেই কোনো উপার্জনের উপায়।
এদিকে মেঝো মেয়েটা আকলিমার (৪) চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। আকলিমা ৫ মাস বয়সে মটর সাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে বড় ধরণের ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাণে বাঁচলেও পিঠের হাড় ভেঙে যায়। সে সমায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করেছেন তিনি। চিকিৎসা চলছিল কিন্তু টাকার জন্য চিকিৎসাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন আকলিমার শরীরে পঙ্গুত্ব দেখা দিয়েছে। শরীরের মাংস বাড়লেও হাড় বাড়ে না। পঙ্গু ভাতার কর্ডের জন্য এলাকার রহমত মেম্বারের কাছে গিয়েছিলেন আনাস আলী। মেম্বার ৩০০ টাকা ‘ঘুষ’ দাবি করে বসেন। আনাস আলীর ভাষায়, ‘নিজের জীবন বাঁচেনা ৩০০ টাকা ঘুষ দেই কোথা থেকে। আমার সামনে ঘুষ নিয়ে সবার কাজ করে দিছে কিন্তু আমার কাজ করে দেয় নাই’।
এক সময় গ্রামের মানুষের পরামর্শে পারি জামালেন ঢাকা শহরে। জায়গা হল ধানমন্ডি কলাবাগান ওভার ব্রীজের নীচে ফুটপথে। পরিবার সহ এখন তিনি সেখানেই থাকেন।
এই টাকা যোগাড় করা এখন অসম্ভব বলে জানান আমজাদ। এক সমায় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি রাস্তায় থাকি না বাবা, ভাগ্য আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।’
মো: সরোয়ার সরদার
Leave a Reply