1. [email protected] : মো: সরোয়ার সরদার : মো: সরোয়ার সরদার
  2. [email protected] : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক
  3. [email protected] : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি
  4. [email protected] : Sadak Mostafa : Sadak Mostafa
  5. [email protected] : বিশেষ প্রতিনিধি : বিশেষ প্রতিনিধি
যেভাবে ঘুরে দাঁড়ালো শ্রীলঙ্কা | ঢাকা আওয়ার
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১২:৩১ অপরাহ্ন

যেভাবে ঘুরে দাঁড়ালো শ্রীলঙ্কা

প্রতিবেদকের নাম
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৬০ সময় দর্শন
ছবি সংগৃহীত

ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জেরে প্রায় দেউলিয়া হওয়া দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় চলে ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতা। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি এখন অনেক অনেকটাই স্থিতিশীল। জর্জরিত শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়িয়ে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। গত অক্টোবরে দেশটির এ হার ১.২ শতাংশে নেমে এসেছে, সেপ্টেম্বরে যা ছিল ১.৯ শতাংশ। তারও আগের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি ৪.৬ শতাংশ ছিল। আর গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ হার ছিল রেকর্ড ৬৯.৮ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের মাথায় মূল্যস্ফীতি ৬৮ শতাংশের বেশি কমিয়ে এনেছে দ্বীপদেশটি। খাদ্য ও জ্বালানি সংকট কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও এখন ঊর্ধ্বমুখী। ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রত্যাবর্তনের যে গল্প লিখে চলেছে শ্রীলঙ্কা, এর পেছনের কারণ ও নীতিগুলো আসলে কী ছিল।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, সুদহার বাড়ানো ও ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা।

মোটা দাগে এই তিন পদক্ষেপ নেয়ায় দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়া ঘোষিত হয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া শ্রীলঙ্কা অবিশ্বাস্যভাবে ১৫ মাস পরে এসে সেই উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছেই অনেকটা ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠেছে।
২০২২ সালের শুরুতে শ্রীলঙ্কায় আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি চলছিল। মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণে দেশটির অর্থনীতির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশ ছুঁয়ে যায়। চরমে পৌঁছায় জ্বালানি সংকট। পেট্রোল পাম্পগুলোয় অপেক্ষমাণ যানবাহনের সারি কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। জন-অসন্তোষ চরমে ওঠে। দ্বিগুণ-তিন গুণ মূল্যেও মিলছিল না খাদ্য ও জ্বালানি। রিজার্ভ শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসায় ডলারের অভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিও বন্ধ করে দিতে হয় শ্রীলঙ্কাকে। একই সঙ্গে পাওনাদারদের দেনা পরিশোধ করতে না পেরে ২০২২ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণায় বাধ্য হয় দেশটি। গত বছর আরও বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল মূল্যস্ফীতি। এ অবস্থা থেকেও দেশটি ফিরে এসেছে বিস্ময়করভাবে। চূড়ান্ত বিপর্যয়ের ওই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৭তম গভর্নর হিসেবে হাল ধরেন আপাদমস্তক ব্যাংকার ড. নন্দলাল বীরাসিংহে।

দেশটির পরিসংখ্যান বিভাগ জানায়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে যে শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতির হার ছিল প্রায় ৭০ শতাংশ, চলতি বছরের জুলাই মাসে সেই হার প্রায় ১০ গুণ কমে দাঁড়ায় মাত্র ৬.৩ শতাংশে। বর্তমানে দেশটির মূলস্ফীতির হার ১.২ শতাংশে নেমে এসেছে। গত বছরের শেষে দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ছিল ১.৯ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গত অক্টোবর শেষে তা ৩.৬ বিলিয়নে (৩৭০ কোটি) ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে সিবিএসএলের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। আইএমএফের ঋণ ও এর পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটায় দেশটি এখন বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নতুন করে ঋণসহায়তার সুযোগও পাচ্ছে। দুর্দশাগ্রস্ত শ্রীলঙ্কার এ ঘুরে দাঁড়ানো রূপকথার গল্পের মতো শোনালেও অর্থনীতির প্রচলিত নীতির কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমেই অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের সব দেশেই মূল্যস্ফীতি কমবেশি বেড়েছে। সমপ্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অনেক দেশেই এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এসেছে, যার মধ্যে আছে ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কাও। শ্রীলঙ্কায় নিত্যনতুন খাতে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসছেন বিদেশিরা। জ্বালানি সরবরাহ এখন স্বাভাবিক। খাদ্যপণ্যের দাম কমতির দিকে। রিজার্ভও ঊর্ধ্বমুখী। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক সংকটের দুর্বিষহ দিনগুলো পেছনে ফেলে এসেছে শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নন্দলাল বীরাসিংহে দেশটির অর্থনৈতিক সংকটকে সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসায় বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দিচ্ছে দেশটি। এরই মধ্যে দেশটির রিজার্ভ বাড়তে শুরু করেছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত পর্যটন থেকেও আয় বাড়ছে। স্থানীয় মুদ্রাও কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে। পাশাপাশি ধীরে ধীরে দেশটি বৈদেশিক ঋণ শোধ করে দিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের কাছ থেকে নেয়া ২০ কোটি ডলারের ঋণ সুদসহ পরিশোধ করে দিয়েছে দেশটি।
সম্প্রতি ঢাকায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে দুই দিনব্যাপী দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নন্দলাল বীরাসিংহে। তাতে তিনি বলেন, সামপ্রতিক সময়ে সার্কভুক্ত দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে পাওয়া আর্থিক সহায়তায় শ্রীলঙ্কা ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে যে সহায়তা দেয়া হয়েছিল তা দেশটির আর্থসামাজিক সংকট কাটাতে বেশ সহায়ক হয়েছিল। এ ধরনের আর্থিক সহায়তা শুধু যে স্বল্পমেয়াদে স্বস্তি দিয়েছে তা নয়, এটি দেশটির অবকাঠামোগত দুর্বলতা কাটাতে ও সামগ্রিক উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের প্রভাব ছাড়াই যাতে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে সে উদ্যোগও নিয়েছে। দেশটির মনিটরি বোর্ডে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি থাকতো। ফলে মুদ্রানীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের প্রভাব রাখার সুযোগ ছিল। কিন্তু আইন পরিবর্তন করে বোর্ডে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা এবং অন্যরা কী করছে সবকিছু বিবেচনা করে শ্রীলঙ্কার জন্য কোন ধরনের নীতি গ্রহণ করাটা সবচেয়ে ভালো হবে গভর্নর সেটিই করেছেন।

বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে তারা আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে, যেটি মূল্যস্ফীতি কমাতেও ভূমিকা রেখেছে। এটিও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়া কিছু খাতে সংস্কারের পাশাপাশি আইএমএফের সঙ্গে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের একটি ‘বেইল আউট প্যাকেজ’ নিয়ে আলোচনা শুরু করেন রনিল বিক্রমাসিংহে। পরে সেটি অনুমোদনও পায়। এরপর সামান্য হলেও খাদ্যমূল্য ও বিদ্যুতের দাম কমিয়ে জনজীবন সহজ করার চেষ্টা করে শ্রীলঙ্কা সরকার। সেই সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার শুরু থেকেই ব্যয় কমানোর চেষ্টা করে ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। জোর দেয়া হয় বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর ওপর। এ ছাড়া ব্যয় সাশ্রয়ে চলতি বছরেও সব মন্ত্রণালয়ের বাজেট ৬ শতাংশ করে কমিয়েছে রনিল বিক্রমাসিংহের সরকার। দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেকে আনার পরিকল্পনাও করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রীলঙ্কা সরকার সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনেক খাতে কর বাড়ানো এবং অনেক খাতে ভর্তুকি কমানোর মতো অ-জনপ্রিয় পদক্ষেপও নিয়েছে, যা জাতীয়তাবাদী চেতনায় বলীয়ান হওয়া জনগণ মেনে নিয়েছে। কিন্তু সবার আগে শ্রীলঙ্কার সরকারকে দেখাতে হয়েছে যে, তার সত্যিকারের সদিচ্ছা আছে মন্দা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের। আর এ বিষয়টিই রাষ্ট্রপরিচালনায় নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের মানুষের জন্য বড় এক শিক্ষা হতে পারে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত এক বছরে শ্রীলঙ্কা যেভাবে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে সেটি বিস্ময়কর। তারা যেসব নীতি গ্রহণ করেছে সেগুলো অর্থনীতির একেবারেই প্রচলিত নীতি বলা যায়। তারা করপোরেট কর, ব্যক্তিগত কর বাড়িয়েছে, অন্যদিকে ব্যয় কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এতে করে দেশটির বাজেট ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কমেছে। মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর্থিক খাতে সংস্কার করা হয়েছে খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য। সেখানে তারা মুদ্রানীতি কঠোর করেছে। মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে তারা নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। আগে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে পারবে- এমন আইন ছিল। কিন্তু বর্তমান গভর্নর এসে এ আইন পরিবর্তন করে সরকারকে টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। আইএমএফ ঋণও এক্ষেত্রে সহায়ক ছিল। সব মিলিয়েই শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক দুর্যোগ সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, আরও বড় বিষয় হলো- এসব কিছু সম্ভব হয়েছে শ্রীলঙ্কার সাবেক রাজাপাকসে সরকারের পরিবর্তনের পর।
সূত্র: মানব জমিন

সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *