1. [email protected] : মো: সরোয়ার সরদার : মো: সরোয়ার সরদার
  2. [email protected] : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক
  3. [email protected] : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি
  4. [email protected] : Sadak Mostafa : Sadak Mostafa
  5. [email protected] : বিশেষ প্রতিনিধি : বিশেষ প্রতিনিধি
একটি বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও বিল গেটস | ঢাকা আওয়ার
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৮:২৫ অপরাহ্ন

একটি বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও বিল গেটস

প্রতিবেদকের নাম
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০
  • ৭৫ সময় দর্শন

গত কয়েক মাস ধরেই এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বটা নানা আকারে ইন্টারনেটে ঘুরছে। তত্ত্বের মূল কথা : বিশ্ব জুড়ে যে করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ছে তার পরিকল্পনা করেছেন বিল গেটস – মার্কিন ধনকুবের ও মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা। এটি একটি বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।

এর প্রবক্তারা বলেন, বিল গেটস একটি অশুভ শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তারাই সারা পৃথিবীতে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেবার পরিকল্পনাটি সাজিয়েছেন।

গেটসের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো কোভিড-১৯ এর একটি টিকার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করা।

কীভাবে ছড়িয়েছিল এসব তত্ত্ব?

এই তত্ত্ব ছড়ানোর কাহিনিও বিচিত্র।

গেটস ২০১৫ সালে কানাডার ভ্যাংকুভারে এক সম্মেলনে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন, “আগামী কয়েক দশকে যদি কোনো কিছুতে এক কোটি লোকের মৃত্যু হয় – সেটা হয়তো হবে অত্যন্ত সংক্রামক একটা ভাইরাস

কোনো যুদ্ধ নয়।”

তখন এ ভাষণকে অনেকেই পাত্তা দেননি, কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির পর অন্তত ৬ কোটি ৪০ লক্ষ লোক সেই বক্তব্য শুনেছে।

ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের কারো ধারণা গেটস পৃথিবীকে জনশূন্য করতে চান, কেউ বলেন তিনি মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দিতে চান, কেউ বলেন তিনি টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করতে চান – এবং ভ্যাংকুভারের ওই ভাষণে ছিল তারই ইঙ্গিত।

করোনাভাইরাসের সঙ্গে বিল গেটসকে জড়িয়ে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে, সেগুলোর কথা গত কয়েক মাসে টিভি, আর ফেসবুক বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোয় অন্তত ১২ লক্ষ বার উল্লেখ করা হয়েছে।

এই সমীক্ষাটি চালিয়েছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং জিগনাল ল্যাবস। এরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো সেগুলো শেয়ার করা হয় লক্ষ লক্ষ বার।

এখন আলোচনায় এসেছে পিরব্রাইট ইনস্টিটিউট

সম্প্রতি হঠাৎ করেই পিরব্রাইট ইনস্টিটিউট নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে বিল গেটসের নাম জড়িয়ে এটিকে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে।

ইংল্যান্ডের সারে কাউন্টিতে অবস্থিত পিরব্রাইট ইনস্টিটিউট হচ্ছে খামারে পালন করা হয় এমন প্রাণীদের দেহে যেসব ভাইরাস আক্রমণ করে – তা নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় এক প্রতিষ্ঠান।

“আমাদেরকে বলা হচ্ছে খুনি। এক দিন একজন ফোন করে বলেছে, আমরা নাকি করোনাভাইরাস সৃষ্টি করেছি, এটাকে জীবাণু অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছি।”

“সে পরে আবার ফোন করে আমাকে যৌন ইংগিতপূর্ণ গালাগালি করে। আমরা আগে কখনো এত হিংস্র কথা শুনিনি” – বলছিলেন ইনস্টিটিউটের টেরিজা মন।

সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা প্রচার : কোভিড-১৯-এর পেটেন্ট করেছে পিরব্রাইট

ব্যাপারটা শুরু হয় জানুয়ারি মাসে। সামাজিক মাধ্যমে কিছু বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেয়া হয় – যাতে ২০১৮ সালে “করোনাভাইরাসের জন্য করা” এক পেটেন্টের সাথে পিরব্রাইট ইনস্টিটিউটকে সম্পর্কিত করা হয়।

জর্ডন স্যাথার নামে একজন ইউটিউবার – যিনি আমেরিকায় ট্রাম্প-সমর্থক কিউএনন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করেন – তিনি কিছু টুইটে এসব অভিযোগ আনেন।

অভিযোগ মূলত দুটি। একটি হলো: পিরব্রাইট প্রজেক্টের অর্থায়নের বড় অংশ দেন বিল ও মেলিন্ডা গেটস। আরেকটি হলো : পিরব্রাইট ইনস্টিটিউট করোনাভাইরাস সংক্রান্ত এক গবেষণার পেটেন্ট বা স্বত্ত্বের অধিকারী।

অনেকেই জানেন যে করোনাভাইরাস একটি বড় প্রজাতি – যার মধ্যে অনেক ধরণের ভাইরাস অন্তর্ভুক্ত। এসব ভাইরাস মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের রোগ সৃষ্টি করে।

বর্তমানে যে কোভিড-১৯ মহামারি চলছে – তার কারণ ‘নতুন’ করোনাভাইরাস যা ২০১৯ সালের শেষ দিকে আত্মপ্রকাশ করে।

এরই সূত্র ধরে জর্ডন স্যাথার ইঙ্গিত করেন যে পিরব্রাইট ইনস্টিটিউট অনেক আগেই এ ভাইরাস চিহ্নিত করেছিল এবং তারা তা পেটেন্ট করেছে।

আসল সত্যটা কী?

সত্য হচ্ছে যে হ্যাঁ, পিরব্রাইট ইনস্টিটিউটের একটি পেটেন্ট আছে।

কিন্তু সেটি মুরগির মধ্যে ছড়ায় এমন একটি করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির গবেষণার সাথে সম্পর্কিত। এবং এই করোনাভাইরাস একটি ‌‘পুরোনো’ করোনাভাইরাস যা সম্পর্কে মানুষ আগে থেকেই জানে।

কিন্তু স্যাথার বিভ্রান্তিকরভাবে টুইটে লেখেন যে, এই পিরব্রাইট প্রজেক্টে বিল ও মেলিন্ডা গেটস অর্থ দেন এবং এর পর তিনি প্রশ্ন রাখেন : এই রোগ ছড়িয়ে দেয়াটা কি পরিকল্পিত ছিল?

এর ফলে কোভিড-১৯ মহামারি এবং বিল গেটসকে নিয়ে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আছে –তার সাথে জড়িয়ে যায় পিরব্রাইট ইনস্টিটিউটের নামও।

পিরব্রাইটকে যে গেটস ফাউন্ডেশন অর্থ দেয় – এটা কোনো গোপন ব্যাপার নয়

সমস্যা হলো, গেটস ফা্উন্ডেশন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমর্থনদাতাদের অন্যতম।

পিরব্রাইট ইনস্টিটিউট যে টিকার ব্যাপারে গবেষণায় তাদের অর্থায়ন পায় এটা খোলাখুলিই স্বীকার করে।

কিন্তু যে গবেষণাটি পেটেন্ট করা হয়েছে তার সাথে গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থের কোন সম্পর্ক নেই।

সামাজিক মাধ্যমে এসব অপপ্রচারের অনেক পরে পিরব্রাইট কোভিড-১৯এর একটি টিকা শূকরের দেহে পরীক্ষার জন্য কাজ শুরু করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের সাথে।

এটি মানুষের দেহে টিকা পরীক্ষার আগে একটি প্রয়োজনীয় ধাপ।

পিরব্রাইট চেষ্টা করেছিল স্যাথারের মন্তব্যের ব্যাপারে তার সাথে যোগাযোগ করার। তিনি সাড়া দেননি।

তবে পরে আরেকটি টুইটে তিনি বলেন, তিনি এমন দাবি করেননি যে পিরব্রাইট নতুন করোনাভাইরাসের জন্য পেটেন্ট করেছে।

পিরব্রাইটের বিরুদ্ধে ঢালাও মিথ্যা প্রচার

ক্রাউডট্যাংগল নামে সামাজিক মাধ্যমে নজরদারির একটি টুল দিয়ে সন্ধান করে দেখা যায়, ২০২০-এর ১৬ জানুয়ারি থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৯১ হাজার রেজাল্ট আসে।

এগুলোতে ইনস্টিটিউটের নামে ঢালাওভাবে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। বলা হয়, পিরব্রাইট করোনাভাইরাস বা তার টিকার পেটেন্ট করেছে, তাদের কার্যালয় আসলে উহানে, এবং তাদের মালিক হচ্ছের বিল গেটস।

পিরব্রাইটের একজন বিশেষজ্ঞ ড. এরিকা বিকারটনকে পাঠানো একটা ইমেইলে বলা হয়, “আপনি এই ভাইরাসের গঠনপ্রকৃতি জানেন, জানেন কি করে একে ধ্বংস করতে হয়। দয়া করে আমার পরিবারকে মরতে দেবেন না, আমার অনুরোধ আমাকে বলুন এর প্রতিষেধক কি।“

একজন তো পিরব্রাইটের নামে একটি ভুয়া ওয়েবসাইটও চালু করেছে। তাতে দেয়া হয়েছে জীবাণু অস্ত্র বিক্রির বিজ্ঞাপন।

পিরব্রাইট এসব হুমকির ব্যাপারে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছে, ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবকে এসব কনটেন্টের কথা জানিয়েছে। পার্লামেন্টারি একটি কমিটিকেও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ দেয়া হয়েছে।

কিন্তু এ ব্যাপারে তেমন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা হতাশ। ফেসবুক বিবিসিকে বলেছে যে পিরব্রাইটের ব্যাপারে মিথ্যা দাবিগুলো তাদের মুছে দেবার মত কনটেন্টের মানদন্ডের মধ্যে পড়ে না। টুইটার বলেছে, তারা কোভি-১৯এর ব্যাপারে সকল টুইটের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয় না।

পিরব্রাইট ইনস্টিটিউটের কর্মীদের জন্য এ ছিল এক কঠিন সময়।

তবে ইদানিং এসব গালাগালি, ফোনে হুমকির মাত্রা কমে এসেছে। হয়তো সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার হয়ে গেছে, এমনটাই মনে করছে ইনস্টিটিউট।

সূত্র : বিবিসি

সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *