1. [email protected] : মো: সরোয়ার সরদার : মো: সরোয়ার সরদার
  2. [email protected] : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক
  3. [email protected] : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি
  4. [email protected] : Sadak Mostafa : Sadak Mostafa
  5. [email protected] : বিশেষ প্রতিনিধি : বিশেষ প্রতিনিধি
জুমা: প্রত্যেক মুসলিমের যে বিষয়গুলো জানা জরুরি | ঢাকা আওয়ার
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন

জুমা: প্রত্যেক মুসলিমের যে বিষয়গুলো জানা জরুরি

প্রতিবেদকের নাম
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯
  • ২২৪ সময় দর্শন

জুমার নামাজ বা শুক্রবারের সালাত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ। আরবি জুমাআহ শব্দটির অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া। যেহেতু, সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামাআতের সাথে সে দিনের জহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজ ফরযরূপে আদায় করে, সে জন্য এই নামাযকে জুমার নামায বলা হয়। সময় একই হলেও যোহরের সাথে জুমার নামাজের নিয়মগত পার্থক্য রয়েছে।

৯) হে বিশ্বাসিগণ, যখন তোমরা জুমার নামাজের জন্য আহূত হও, তখন আল্লাহ স্মরণের দিকে সত্বর হইও, এবং ক্রয় বিক্রয় পরিত্যাগ করিও; যদি তোমরা বুঝিতেছ, তবে ইহাই তোমাদের পক্ষে কল্যাণ।
(১০) যখন নামাজ সমাপ্ত হয়, তখন ভূতলে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িও এবং সৃষ্টিকর্তা (আল্লাহর) করুণায় (জীবিকা ) অন্বেষণ করিও ও আল্লাহ কে প্রচুররূপে স্মরণ করিও; সম্ভবতঃ তোমরা উদ্ধার পাইবে।

- কোরআন, সূরা : ৬২ (আল-জুমুআ), আয়াত ৯-১০

জুমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল খুতবা। এতে ইমাম সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ও কুরআন-হাদীসের আলোকে দিকনির্দেশনা দেন। যে ইমাম খুতবা দেন তাকে বলা হয় খতিব। এ সময় দুইটি খুতবা দেয়া হয়। দুই খুতবার মাঝখানে অল্প কিছু সময়ের বিরতি নেয়া হয়। মসজিদের প্রতিদিনের ইমাম খুতবা দিতে পারেন বা জুমার দিন বিশেষ কেউ খুতবা দিতে পারেন। খুতবা সাধারণত আরবি ভাষায় দেয়া হয়।

জুমার দিনের ফজিলত ও নির্দেশনা প্রসঙ্গে হজরত আবু লুবাবা ইবনে আবুল মুনজির (রা:) বর্ণনা করেন, আমি বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা:) কে বলতে শুনেছি- জুমার দিন সপ্তাহের সব দিনের সরদার, আল্লাহ তায়ালার কাছে অন্য সব দিনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত দিন। এই দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা অপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান।

এই দিনে পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম (আ:) কে সৃষ্টি করেছেন। এই দিনেই তাকে জমিনে নামিয়েছেন এবং এই দিনেই তাকে মৃত্যু দিয়েছেন। এই দিনে এমন এক মুহূর্ত আছে, যে মুহূর্তে বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে যা চাইবে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তাকে তা দেবেন। এই দিনে কেয়ামত সংঘটিত হবে। সেজন্য সব নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, আসমান-জমিন, পাহাড়-সমুদ্র, আলো-বাতাস সবাই জুমার দিনকে ভয় করে।

জুমার দিনের ৩৮টি আমল

১। জুম’আর দিন গোসল করা। যাদের উপর জুম’আ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন(বুখারীঃ ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।

২। জুম’আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)

৩। মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭, ইঃফাঃ৮৪৩)

৪। গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ৮৮৩)

৫। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুম’আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ১০৯৭)

৬। মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ১১৩৬)

৭। মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩, আহমাদঃ১/২৩০)

৮। আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিমঃ৮৫০)

৯। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)

১০। জুম’আর দিন ফজরের নামাজে ১ম রাক’আতে সূরা সাজদা (সূরা নং-৩২) আর ২য় রাকা’আতে সূরা ইনসান(দাহর)(সূরা নং-৭৬) পড়া। (বুখারীঃ৮৯১, মুসলিমঃ৮৭৯)

১১। সূরা জুম’আ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুম’আর সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুম’আ আদায় করা। (মুসলিমঃ৮৭৭, ৮৭৮)

১২। জুম’আর দিন ও জুম’আর রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদঃ ১০৪৭)

১৩। এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা।। (বুখারীঃ ৯৩৫)

১৪। মুসুল্লীদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারীঃ৯১০, ৮৮৩)

১৫। মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)

১৬। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারীঃ৯১১, মুসলিমঃ২১৭৭, ২১৭৮)

১৭। খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দু’রাকা’আত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারীঃ ৯৩০)

১৮। জুম’আর দিন জুম’আর পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোন শিক্ষামুলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। (আবু দাউদঃ ১০৮৯)

১৯। কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ ৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)

২০। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)

২১। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)

২২। ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদঃ ১১১০, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)

২৩। খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদঃ ১১০৮)

২৪। জুম’আর দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)

২৫। জুম’আর আযান দেওয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর যে আযান দেওয়া হয় তা।(বুখারীঃ ৯১২)

২৬।জুম’আর ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারীঃ ১৮২, মুসলিমঃ ৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)

২৭। উযর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুম’আ চালু না করা। আর উযর হল এলাকাটি খুব বড় হওয়া, বা প্রচুর জনবসতি থাকা, বা মসজিদ দূরে হওয়া, বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া, বা কোন ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। (মুগনি লিবনি কুদামাঃ ৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহঃ ২৪/২০৮)

২৮। ওজু ভেঙ্গে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। অতঃপর আবার ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। (আবু দাউদঃ ১১১৪)

২৯। একান্ত উযর না থাকলে দুই পিলারে মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সালাত আদায় না করা। (হাকেমঃ ১/১২৮)

৩০। সালাতের জন্য কোন একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা (আবু দাউদঃ৮৬২)। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।

৩১। কোন নামাজীর সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসুল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারীঃ৫১০)

৩২। এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদঃ ১৩৩২)

৩৩। পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফযীলত অন্তরে জাগরূক রাখা।

৩৪। হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।

৩৫। খুৎবার সময় খতীবের কোন কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরীক হওয়া জায়েজ। (বুখারীঃ ১০২৯, মুসলিমঃ ৮৯৭)

৩৬। হানাফী আলেমগন বলেছেন যে, ভিড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসুল্লীর পিঠের উপর সিজদা দেওয়া জায়েজ (আহমাদঃ১/৩২)। দরকার হলে পায়ের উপর ও দিতে পারে (আর রাউদুল মুরবী)

৩৭। যেখানে জুম’আর ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হল ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোন কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (মুসলিমঃ ৭১০, বুখারীঃ ৮৪৮)

৩৮। ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা- ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে রত থাকা।

প্রশ্ন: পরপর তিন জুম্মা মিস করলে শুনেছি ইসলাম হতে খারিজ হয়ে যায় এটা কি সত্যি?

উত্তর: এখানে ইসলাম থেকে খারিজ মানে কাফির হয়ে যাওয়া নয়। মুসলিম কম্যুনিটি থেকে দূরে সরে যাওয়া। অতএব, মারাত্মক অসুস্থতা, দূরের ভ্রমন, যে দেশ বা সমাজে জুমার ব্যবস্থা নেই বা শরীয়তসম্মত অন্য কোনো কারণ ছাড়া একাধারে তিন জুম্মা ছেড়ে দেওয়া খুবই নিন্দনীয় কাজ। অনেকটা ইসলাম থেকে খারিজ হওয়ার মতই। বিশেষ করে মুসলিম শাসন এলাকার যখন সামাজিকভাবে জুমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও যথাযোগ্য মর্যাদায় আদায় করা হয়। আর যে জনপদে খেলাফত বা শরীয়তী শাসন কায়েম থাকে এবং শাসক বা তার প্রতিনিধি জুমা পড়ান, সেখানে উপস্থিত থাকা অনেক বেশি জরুরী। এটি কেবল সওয়াবের জন্য নয়, জাতীয় সংহতি ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওয়াজিব হুকুম, তখন সেই জুমার নামাজকে আরও বেশি ভাবগম্ভীর ও অবশ্য পালনীয় করে তোলে। সে জুমা হাজারগুণ অধিক মহিমান্বিত।

ঢাকাআওয়ার/এসএসআর

সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *