1. [email protected] : মো: সরোয়ার সরদার : মো: সরোয়ার সরদার
  2. [email protected] : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক
  3. [email protected] : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি
  4. [email protected] : Sadak Mostafa : Sadak Mostafa
  5. [email protected] : বিশেষ প্রতিনিধি : বিশেষ প্রতিনিধি
মুহাম্মদ (সাঃ): পথহারা মানবজাতির পথপ্রদর্শক | ঢাকা আওয়ার
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন

মুহাম্মদ (সাঃ): পথহারা মানবজাতির পথপ্রদর্শক

প্রতিবেদকের নাম
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
  • ২৩২ সময় দর্শন

অপসংস্কৃতির ঘোর অন্ধকার যখন পৃথিবীকে গ্রাস করেছে, মানবসমাজে মনুষ্যত্ব ও মানবতা যখন ধুলায় মিশ্রিত; সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা করুণ; ব্যক্তিপূজা, অগ্নিপূজাসহ বহুঈশ্বরে বিশ্বাসী আরব সমাজ যখন অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিযোগিতা করছে; নীতি-নৈতিকতার বিষয়টি যখন একেবারেই অনুপস্থিত এবং অস্থিরতা, অরাজকতা ও অশান্তি যখন সর্বত্র বিরাজমান; ঠিক তখনই বিশ্বের সব মানুষের শান্তি ও কল্যাণের শাশ্বত বার্তা নিয়ে এ পৃথিবীতে শুভাগমন করেন পথহারা মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মহামানব, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম

যে বছর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জম্মগ্রহণ করেন, সে বছর আসহাবুল ফীল য়্যামনের শাসনকর্তা আবরাহা (হস্তি-বাহিনীসহ) বায়তুল্লাহ্ শরীফে আক্রমণের চেষ্টা করে। সেই হস্তি বছরেই (আমুল দীল) রবিউল আউয়াল মাসের এক সোমবারে মক্কার কুরায়শ গোত্রের হাশিমী শাখায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম হয়।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জম্মের সঠিক তারিখ নির্ধারণে চারটি মত রয়েছে, যথা- রবিউল আউয়াল মাসের ৮, ৯, ১০, ও ১২ তারিখ। তবে রবিউল আউয়াল মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে সোমবার দিন যে তাঁর জন্ম তা ইতিহাসবিদগণ সবাই ঐক্যমত।

সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘উলামার মতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ১২ রবিউল আউয়াল। হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী ও ইবনুল আসীর প্রমুখ এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মাতৃগর্ভে তখন পিতা আবদুল্লাহ্-এর মৃত্যু হয়। পিতামহ আবদুল মুত্তালিব তাঁর নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’। মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বপ্রথমে তাঁর মাতা আমিনার স্তন্যপান করেন। এর দু’তিন দিন পর তিনি তাঁর পিতৃব্য আবু লাহাবের দাসী সুত্তয়াইবার দুধ পান করেন। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের সপ্তম দিনে দাদা ‘আবদুল মুত্তালিব তাঁর আকীকা সম্পন্ন করেন।

মুহাম্মদ (সাঃ) খতনাকৃত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হন। আরবের অভিজাত বংশের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তাইফের সাদ গোত্রের জনৈকা ধাত্রী হালিমা সাদিয়া (রাঃ)-এর নিকট তাঁর স্তন্যপান ও লালন-পালনের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। সেখানেই তিনি পাঁচ বছর লালিত-পালিত হন।

মুহাম্মদ (সাঃ) এর শৈশব

মুহাম্মদ (সাঃ) -এর ছয় (৬) বছর বয়সে তাঁর মাতা আমিনার মৃত্যু হয়। পিতামহ আব্দুল মুত্তালিব তাঁর লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আট বছর বয়সে পিতামহও ইন্তেকাল করেন। তাঁর লালন-পালনের ভার তখন চাচা আবু তালিবের নিকট বর্তায়।

মুহাম্মদ (সাঃ) বাড়ির বিভিন্ন কাজ ও দুধভাই আব্দুল্লাহসহ মাঠে ছাগ-মেষ চরাতে যেতেন। কিন্তু তিনি চপলতাসুলভ ক্রীড়া-কৌতুক ও কলহে লিপ্ত হতেন না। একদা মাঠে ছাগ-মেষ চরাবার সময়ে দুজন ফেরেশতা তাঁর বক্ষ বিদারণ করে শয়তানী স্বভাব ও যাবতীয় পাপের মূল উৎস এক খন্ড কাল জমাট রক্ত ফেলে দিয়ে এতে ঈমানী জ্যোতি পূর্ণ করে দেন।

ব্যাবসা বাণিজ্য

আরবের মূরুভূমি। সূত্র: ইন্টারনেট

মুহাম্মদ (সাঃ) -এর বয়স যখন বারো বছর তখন আবু তালিব তাঁকে নিয়ে ব্যবসার কাজে সিরিয়ায় যেতেন। বিশ বছর বয়সে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ব্যবসা আরম্ভ করেন। মুহাম্মদ (সাঃ) -এর সততা, মহানুভবতা, সদাচার, আমানতদারী ও খিয়ানতদারী সুখ্যাতি লাভ করে। সবার কাছে তিনি বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠেন। তাঁর এমন গুণাবলীর জন্য ‘আল-আমীন’ অর্থাৎ বিশ্বাসভাজন উপাধিতে ভূষিত হন।

মক্কার উচ্চমনা, বিচক্ষণা, বুদ্ধিমতী, নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ধনবতী বিধবা এক নারী ছিলেন খাদিজা। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা, বিশ্বস্ততা ইত্যাদি সদগুণের কথা খাদিজা’র কাছেও পৌছে যায়। এমন গুণের কথা শুনে খাদিজা তার সঙ্গে অংশীদারীত্বে ব্যবসা করতে মুহাম্মদ (সাঃ) কে আহ্বান জানান। খাদিজার প্রস্তাবে মুহাম্মদ (সাঃ) সম্মত হয়ে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে বাণিজ্যে যাত্রা করেন। সেখানে পৌঁছে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবসার মাল প্রচুর লাভে বিক্রয় করেন এবং সেখান থেকে বিভিন্ন প্রকারের পণ্যদ্রব্য ক্রয় করে মক্কায় ফিরেন ও এই সকল পণ্যদ্রব্য খাদিজার হস্তে সমর্পণ করেন

মুহাম্মদ (সাঃ) এ সকল পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করে লাভবান হন। মায়সারা নামক খাদিজার এক ভৃত্য (চাকর) সিরিয়াতে দু’বার বাণিজ্যযাত্রায় মুহাম্মদ (সাঃ) -এর অনুগামী হন। ভৃত্য মায়সারার মুখে প্রতিনিধি মুহাম্মদ (সাঃ) -এর গুণের বিবরণ শোনেন খাদিজা।

বিবাহ

মুহাম্মদ (সাঃ) এর বাণিজ্য দক্ষতা এবং সততার কথা জেনে তদুপরি তাঁর বিনয়, ভদ্রতা, শিষ্টাচার এবং উত্তম চরিত্রের বিশেষ গুণ দেখে খাদিজা তাঁর সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন।

আবু তালিবের সম্মতিক্রমে মুহাম্মদ (সাঃ) ও খাদিজা (রাঃ) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ সময় মুহাম্মদ (সাঃ) -এর বয়স পঁচিশ বছর এবং খাদিজা (রাঃ) -এর বয়স চল্লিশ বছর।

খাদিজা (রাঃ)-এর গর্ভে দুই পুত্র এবং চার কন্যা জন্মগ্রহণ করেন। পুত্ররা হলেন- কাসিম (রাঃ) ও তাহির (রাঃ) এবং কন্যারা হলেন- ফাতিমা (রাঃ), যায়নব (রাঃ), রুকায়্যা (রাঃ) ও উম্মে কুলসুম (রাঃ)।

তবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর তৃতীয় পুত্র ইব্রাহীম (রাঃ) মারিয়া কিবতিয়া (রাঃ) এর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। পুত্র সন্তানগণ শৈশবেই ইন্তেকাল করেন। খাদিজা (রাঃ) এর পয়ষট্টি বছর বয়সে মৃত্যু পর্যন্ত মুহাম্মদ (সাঃ) আর বিবাহ করেননি।

জীবনের নানা দিক

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বাল্যকাল থেকেই গভীর চিন্তাশীল ছিলেন। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আরব গোত্রসমূহের বিবেকবুদ্ধি বর্জিত মূর্তিপূজা ও বর্বরোচিত মারামারি, কাটাকাটি, রাহাজানি, মদ্যপান, জুয়াখেলা, অবিচার, ব্যভিচার ইত্যাদি অনাচার দেখে এসবের সুরাহা নিয়ে তিনি চিন্তা শুরু করেন। গৃহ ছেড়ে মক্কা হতে দু’তিন মাইল দূরে জাবালে নূরের হেরা গুহায় তিনি ধ্যান ও প্রার্থনায় সময় কাটান। মাঝেমধ্যে তিনি গৃহে প্রত্যাবর্তন করতেন। এ সময়ে তিনি একটি স্বর্গীয় আলোক এবং অশ্রুতপূর্ব শব্দতরঙ্গ শুনতে পান। এ সময় থেকেই তিনি স্বপ্নযোগে যা দেখতে পেতেন তা বাস্তবে পরিণত হত। অবশেষে একদা আল্লাহর দূত ওহীবাহক হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আগমন করে সূরা আলাক এর পাঁচটি আয়াত (৯৬ঃ ১-৫) পাঠ করে শুনান। ওহীকালে তাঁর বয়স ছিল চল্লিশ বছর।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অতি সতর্কতার সঙ্গে কুরায়শ বংশের আপনজনের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত দেন। এ দাওয়াতে সর্বপ্রথম খাদিজা (রাঃ), আবুবকর (রাঃ), আলী (রাঃ), রসূলের পোষ্যপুত্র যায়দ (রাঃ), ধাত্রী উম্মু আয়মান (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন। অপরদিকে হযরত আবুবকর (রাঃ) এর দাওয়াতে উসমান (রাঃ), আব্দুর রহমান ইবন আওফ (রাঃ), সাদ ইবন ওয়াক্কাস (রাঃ), যুবায়র (রাঃ), তালহা (রাঃ) প্রমুখ ইসলাম গ্রহণ করেন। এভাবে সংগোপনে তিন বছর ইসলাম প্রচারের কাজ চালাবার পর নুবুওয়তের চতুর্থ বর্ষে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের কাজে আদিষ্ট হন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে উচ্চকণ্ঠে কুরাইশ বংশের সকল গোত্রের নামোল্লেখ করে তাদেরকে জড়ো করেন এবং ইসলামের দাওয়াত দেন। তারা তাঁর এ দাওয়াতে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। তখন থেকেই কুরাইশগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবীদের উপর নিপীড়ন শুরু করে।

কুরাইশগণ পবিত্র কাবার সেবক হিসেবে পৌরহিত্যের কল্যাণে সমগ্র আরবে সম্মানিত ছিল। মক্কা ও বহির্মক্কায় তারা নিরাপত্তা ও বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা ভোগ করত। তাঁদের পৌত্তলিক ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত করায় এবং ইসলাম গ্রহণ করলে তাদের চিরাচরিত সুযোগ সুবিধা ব্যাহত হবে আশঙ্কা করে কুরায়শগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিরোধিতা শুরু করে। তাদের বিরোধিতার ধারা ছিল মুখরোচক কাহিনী ও গল্পের মাধ্যমে কোরআন শ্রবণে মানুষকে বিরত রাখা এবং মুহাম্মদ (সাঃ) এর নামে নানা কুৎসা রটনা এবং বল প্রয়োগ করে ইসলাম প্রচারণা থেকে মুসলমানদের বিরত রাখা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদেরকে ক্রমবর্ধমান উৎপীড়নের মুখে হাবশায় (বর্তমানে ইথিওপিয়া) হিজরতের পরামর্শ দেন। নুবুয়তের পঞ্চম বছর রজব মাসে এগারো জন পুরুষ ও চারজন মহিলা হাবশায় হিজরত করেন। এরপর জাফর ইবন আবু তালিব (রাঃ) সহ তিরাশিজন সাহাবী ক্রমে হিজরত করতে থাকেন।

এদিকে তেজস্বী বীর উমরের (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের ঘোষণায় কুরাইশরা আরও বিচলিত হয় এবং তারা তাদের পরিণাম সম্পর্কে  ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। মুশরিকগণ সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, বনু আব্দুল মুত্তালিব ও বনু হাশিম মুহাম্মদ (সাঃ) কে তাদের নিকট সমর্পণ করবে নতুবা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। বনু আব্দুল মুত্তালিব মুশরিকদের দাবি না মানায় তারা এক অঙ্গীকারপত্র লিখে বনু আব্দুল মুত্তালিব ও হাশিমের সঙ্গে সর্বপ্রকার সম্পর্কচ্ছেদ করলো।

তাদের সঙ্গে আলাপ-কুশল সামাজিক ও অর্থনৈতিক লেনদেন ও বিয়ে-শাদী বন্ধ রাখবে। কেউ তাদেরকে কোনো সাহায্য করলে সে কঠোর দণ্ডপ্র্রাপ্ত হবে।

এ অঙ্গীকারপত্র লিখে বায়তুল্লাহ শরীফে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আবু লাহাব ব্যতীত বনু হাশিম ও বনু আব্দুল মুত্তালিব-এর মুসলিম কাফির নির্বিশেষে সকলেই শেব-ই-আবু তালিব অর্থাৎ পাহাড়বেষ্টিত আবু তালিবের গিরিসংকটে অবরুদ্ধ হন। এখানে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় অবর্ণনীয় দুরবস্থা দেখা দেয়। রসদপত্র ফুরিয়ে যায়। ক্ষুধার যাতনায় বৃক্ষের পাতাও খেতে হয়েছে। এ গিরিসংকটে তাঁরা অবরুদ্ধ জীবনযাপন করেন। দুই বছরের অধিক কাল অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর সাথীদের উপর থেকে অবরোধ উঠিয়ে নেওয়া হয়।

অবরোধের অবসান ঘটলো, কিন্তু নবুয়তের দশম বর্ষের শাওয়ালের মাঝামাঝি সময়ে আবু তালিব মৃত্যুবরণ করেন এবং এর তিনদিন পর খাদিজা (রাঃ) ইনতিকাল করেন। এ দুই বিয়োগ বেদনায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুহ্যমান হয়ে পড়েন। তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁদের ইন্তেকালের বছরকে ‘আমুল হুয্ন বা শোক বর্ষ’ বলে অভিহিত করেন।

মিরাজের ঘটনা

আল-আকসা মসজিদ। সূত্র: ইন্টারনেট

নুবুওয়তের দশম বছরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মিরাজে গমন করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা এবং সেখান থেকে সপ্তাকাশ ভ্রমণ করেন।

২৭ রজবের রাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হাতীমে কাবায় শোয়া অবস্থায় ছিলেন। জিব্রাঈল (আঃ) তাঁকে বুরাকে আরোহণ করান এবং চোখের নিমিষে মসজিদে আকসায় পৌঁছান। সেখানে পূর্ববর্তী সকল নবী (আঃ) কে মুহাম্মদ (সাঃ) এর সম্মানার্থে মুজিযাস্বরূপ সমবেত করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামাযের জন্য নবী ও রসূলদের ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি মসজিদুল আকসা থেকে সপ্তাকাশ পরিভ্রমণ করেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সিদরাতুল মুন্তাহার দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। পথিমধ্যে হাউযে কাউসার অতিক্রম করে জান্নাতে প্রবেশ করেন। তথা থেকে তিনি বের হলে তাঁর সামনে জাহান্নাম পেশ করা হয়। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একাকী অগ্রসর হতে থাকলেন, আর জিব্রাঈল (আঃ) সম্মুখে অগ্রসর না হয়ে থেমে গেলেন। এ সময়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহ্ তাআলার চাক্ষুস দীদার লাভ করেন এবং তাঁর সঙ্গে সরাসরি আলাপ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। এ সময়েই পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হয়। পরে তিনি সেখান থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসেন এবং বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে বুরাকে আরোহণ করে মক্কায় পৌঁছেন। এই মিরাজ তাঁর মনোবল বাড়িয়ে দেয়।

মদিনায় হিজরত

হজের মওসুমে ইসলামের দাওয়াতের ফলে মদিনায় ইসলাম প্রচারিত এবং অবশেষে সেখানে হিজরত সংঘটিত হয়। প্রথমে আকাবা নামক উপত্যকায় মদিনার খায্রাজ গোত্রের ছয়জন হজযাত্রী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাতে বয়আত গ্রহণ করেন। এদেরই প্রচেষ্টায় মদিনায় ইসলাম দ্রুত প্রসার লাভ করে। এরপরের বছর হজের সময়ে বারোজন মদিনাবাসী রাতের অন্ধকারে গোপনে আকাবায় বয়আত গ্রহণ করেন। এটিই প্রথম বায়আতুল আকাবা নামে খ্যাত।

পরবর্তী বছর হজের সময়ে দু’জন মহিলাসহ তিয়াত্তর জন মদিনাবাসী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সঙ্গে দ্বিতীয় ‘বায়আতুল আকাবা’ একই স্থানে গভীর রাতে সংগোপনে সমাপ্ত হয়। তারা বীরত্বব্যঞ্জকভাবে বললেন, তারা আরবের সকল মুশরিক গোত্রের সঙ্গে যুদ্ধের ঝুঁকি সামলাতেও প্রস্তুত রয়েছেন।

মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় মুসলমানদেরকে হিজরত করার নির্দেশ দেন। মক্কাবাসীদের বিভিন্ন বাধা বিপত্তির মুখে মুসলমানরা হিজরত করতে থাকেন। অনেকে ধনসম্পদ ছেড়ে, পরিবার পরিজন ফেলে রিক্ত হস্তে হিজরত করেন। মদিনাবাসী আনসারগণ মক্কার মুহাজিরদেরকে নিজ নিজ গৃহে স্থান দিয়ে তাঁদের সঙ্গে গভীর ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হন।

মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেও মদীনায় হিজরত করার সংকল্প করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ যুগপৎ আঘাতে মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অপরদিকে মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ’র তরফ থেকে হিজরতের হুকুম লাভ করে আবুবকর (রাঃ) সহ মদিনাভিমুখে বেরিয়ে পড়েন। হিজরতের পথে তাঁরা উভয়ে ছওর পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করেন। সেখানে তিন দিন অবস্থানের পর তাঁরা উভয়ে মদিনাভিমুখে রওয়ানা দেন।

{অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে ৮ রবীউল আউয়াল নুবুওয়তের ত্রয়োদশ বর্ষে মদিনা থেকে তিন মাইল দূরে তাঁরা কুবা উপশহরে পৌঁছান এবং সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটিই প্রথম মসজিদ}

কুবা থেকে মদিনায় যাত্রার পথে বনু সালিম গোত্রের মহল্লায় মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বপ্রথম সালাতুল জুমা আদায় করেন এবং খুত্বা প্রদান করেন। যাত্রাপথে বনু নাজ্জারসহ সকল গোত্রের আনসার দলে দলে আগমন করে তাঁকে সম্বর্ধনা জানান। মসজিদে নববী নির্মিত হবার পর এর সংলগ্ন দেয়ালের পাশেই নির্মিত হয় মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবাস এবং উম্মুহাতুল মুমিনদের হুজরা (কক্ষসমূহ)। মসজিদের একপাশে ‘সুফ্ফা’ নামে একটি চত্বর তৈরি করা হয় যা নিঃস্ব মুহাজিরদের আশ্রয়স্থল ছিল। এই সুফ্ফাই ছিল সর্বপ্রথম ইসলামের শিক্ষালয়।

মদিনা সনদ

মদিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে দেশের কাজে নিয়োগের উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ (সাঃ) মুসলিম, ইহুদি এবং মুশরিকদের সমন্বয়ে মদিনাকে একটি রাষ্ট্রের রূপ দিতে মনোনিবেশ করেন। মুসলিম, ইহুদি ও মুশরিকদের সমন্বয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে তিনি একটি সনদ লিপিবদ্ধ করেন। এই সনদে মদিনার নিরাপত্তার বিভিন্ন ব্যবস্থাসহ ইহুদি, মুশরিক ও মুসলমানদের সম্পর্ক, অধিকার, দায়িত্ব, বিচারব্যবস্থা সম্পর্কিত শর্তাবলী লিপিবদ্ধ হয়।

কতিপয় পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের নামোল্লেখসহ তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা এই সনদে স্বীকৃত হয়। মুহাম্মদ (সাঃ) এই সমাজ ব্যবস্থার প্রধান নির্বাচিত হন। তিনি ওদ্দাম, যুলআশীরা প্রভৃতি গোত্রের এলাকায় গমন করে এই সনদে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষর ও সম্মতি গ্রহণ করেন। এভাবে তিনি মৈত্রীচুক্তি দ্বারা মদিনার অমুসলিমদিগকে ধর্মীয় স্বাধীনতা দান করে মুসলিমদের সঙ্গে এক জাতি গঠনের ভিত্তিস্থাপন করেন। এ দ্বারা আপদে-বিপদে সকলে একযোগে কাজ করে মদিনা নগরীকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মদিনা একটি ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

বদর যুদ্ধ

বদর যুদ্ধ, প্রতীকি ছবি। সূত্র: ইন্টারনেট

হিজরি দ্বিতীয় সালের রমাযান মাসে মক্কার এক হাজার কুরায়শ যোদ্ধা অস্ত্রসজ্জিত হয়ে মদিনা আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ৩১৩ জন সঙ্গীসহ আক্রমণ প্রতিরোধ করতে অগ্রসর হন। তাঁদের অস্ত্রসজ্জা ও রসদ খুবই অপ্রতুল ছিল। ১৭ রামাযান তিনি বদর প্রান্তরের নিকটে আগমন করে অগ্রদূতের সংবাদে এখানে ছাউনী স্থাপন করেন। বদর প্রান্তরে ভীষণ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে কুরাইশগণ শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। তেরো জন মুসলিম শাহাদাতবরণ করেন। মুশরিকদের পক্ষে সত্তর জন নিহত ও সত্তর জন বন্দী হয়। বদর যুদ্ধ থেকেই শুরু হয় ইসলামের মহাজয় যাত্রা।

দ্বিতীয় হিজরি সনে রমযানের রোজা ফরয হয় এবং সাদাকাতুল ফিত্রা প্রদানের বিধান প্রবর্তিত হয়। বদর যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সর্বপ্রথম ঈদুল ফিত্রের নামায আদায় করেন। এ বছরই ঈদুল আযহার নামায ও কুরবানী ওয়াজিব এবং যাকাত ফরয হয়।

উহুদ যুদ্ধ

হিজরি তৃতীয় সনে আবু সুফিয়ান কুরাইশদের প্রধান সর্দার নির্বাচিত হয়। তার নেতৃত্বে তিন হাজার সৈনিকের এক বিশাল বাহিনী মদিনাভিমুখে যাত্রা করে। মুশরিক বাহিনীর পুরোভাগে ছিল দেবতা হুবলের প্রতিমা এবং এরপর চৌদ্দজন মহিলা। এই মহিলাদের প্রধান ভূমিকা ছিল গান গেয়ে ও কবিতা আবৃত্তি করে রণোম্মাদনা সৃষ্টি করা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক হাজার সৈন্যসহ প্রতিরোধযুদ্ধ রচনা করেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সৈন্যদের সারিবদ্ধ করে স্থান নির্ধারণ করে দেন। উহুদ পাহাড়ের পশ্চাতে গিরিপথ দিয়ে শত্রুদের আক্রমণের আশঙ্কা থাকায় ‘আব্দুল্লাহ্ ইবন যুবায়র (রাঃ) এর নেতৃত্বে তিনি পঞ্চাশজন তীরন্দাজকে নিয়োজিত করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কঠোর নির্দেশ দেন যে, কোনো অবস্থাতেই তাঁরা যেন গিরিপথ ত্যাগ না করেন। মুসলিম বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে শত্রুসৈন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে থাকে। জয় হয়েছে ভেবে গিরিপথে পাহারারত বেশ কিছুসংখ্যক তীরন্দাজ তাঁদের নেতা ‘আব্দুল্লাহ’র নির্দেশের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে স্থান ত্যাগ করে জয়োল্লাস শুরু করেন। শত্রুরা সুযোগ বুঝে গিরিপথ দিয়ে পেছনদিক থেকে আক্রমণ চালায়। শত্রুর আক্রমণে অকস্মাৎ মুসলিম বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়েন। পতাকাবাহী মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ) শহীদ হন। তবে অচিরেই মুহম্মদ (সাঃ) এর বাহিনী ঘুরে দাঁড়ায়।

প্রচন্ড আক্রমনের মুখে শত্রুবাহিনী পলায়ন করে। এ যুদ্ধে মুসলিমদের সত্তর জন শাহাদতবরণ করেন। উহুদে চরম যুদ্ধের সময়ে মুহাম্মদ (সাঃ) দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ্ আমার কওমকে হিদায়ত দান করুন, তারা অজ্ঞ।’

আইশা (রাঃ), ফাতিমা (রাঃ) প্রমুখ মুসলিম মহিলা এ যুদ্ধে আহতদের সেবা করেন।

খন্দকের যুদ্ধ বা পরিখার যুদ্ধ

হিজরি চতুর্থ সনে শত্রুদের সঙ্গে ছয়টি সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। হিজরি পঞ্চম সনে শত্রুর বিরুদ্ধে চারটি সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খন্দকের যুদ্ধ, যা পরিখার যুদ্ধ নামেও ইতিহাসে পরিচিত। পরিখার যুদ্ধ বলার কারণ, মুশরিকদের আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য মদিনার উত্তর পূর্বদিকে পরিখা খনন করা হয়েছিল। পরিখা অতিক্রম করতে না পেরে তারা তীর ও পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। কিন্তু মুসলমানদের প্রতিরোধের মুখে কোনো সুবিধাজনক অবস্থা সৃষ্টি করতে না পেরে কাফেররা মদিনা অবরোধ উঠিয়ে নিয়ে মক্কায় প্রত্যাবর্তন করে।

হুদায়বিয়ার সন্ধি

এই স্থানেই হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়। সূত্র: ইন্টারনেট

ষষ্ঠ হিজরির যুলকাদা মাসে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পনের শত সাহাবীসহ উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা মুকাররামা অভিমুখে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে মক্কার নিকটে হুদায়বিয়া নামক স্থানে কুরাইশরা তাঁদের গতিরোধ করে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সঙ্গে কুরাইশদের এক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি ইতিহাসে হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে খ্যাত।

এই সন্ধি অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ওই বছর উমরা পালন না করে সাহাবীগণসহ মদিনায় ফিরে যান। পরের বছর কাযা উমরা পালন করেন। উভয়পক্ষ নিরাপত্তা লাভ করে।এই সন্ধিচুক্তি মুসলিমদের অনুকূলে না হলেও প্রকৃতপক্ষে এটিই ছিল ইসলামের বিজয় সূচনা। এটিই শত্রু কর্তৃক ইসলামী শক্তির প্রথম স্বীকৃতি।

খায়বার যুদ্ধ

সপ্তম হিজরি সনে খায়বর যুদ্ধ সংঘটিত হয় ইহুদিদের বিরুদ্ধে। ইতিপূর্বে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য রসূলুল্লাহ (সাঃ) মদিনা থেকে ইহুদিদের উৎখাত করেন। উৎখাতে ইহুদিরা খায়বরে গিয়ে অন্যান্য ইহুদিদের ইসলামের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ করতে থাকে।

পনের শত সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খায়বর আক্রমণ করেন এবং খায়বর দখল করেন। এ যুদ্ধে তিরানববই জন ইহুদি নিহত হয় এবং পনেরজন সাহাবী শাহাদতবরণ করেন। খায়বরের সমুদয় স্থাবর সম্পত্তি তখন থেকে মদিনা ইসলামী রাষ্ট্রের মালিকানাধীন হয়ে যায়।

মক্কা বিজয়

হুদায়বিয়ার সন্ধির পর শান্তির আবহাওয়ার ভিতর দিয়ে পূর্ণ দু’বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর অষ্টম হিজরিতে কুরাইশ কাফিররা চুক্তিভঙ্গ করে। কুরায়শ ও তার মিত্রগোত্র মুসলিমদের এক মিত্রগোত্রকে আক্রমণ করে বহু লোক নিহত করে।

সন্ধিভঙ্গ হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দশ হাজার সৈন্যসহ মক্কা বিজয়ে অগ্রসর হন। শত্রু দলপতি আবু সুফিয়ান তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিনাযুদ্ধে বিজয়ীবেশে মক্কায় প্রবেশ করেন এবং কাবা শরীফে গমনপূর্বক তওয়াফ করেন।

এ সময় কাবা প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত ৩৬০টি মুক্তি একে একে তাঁর লাঠির স্পর্শে ভূপাতিত করেন। তাঁর আদেশে উমর (রাঃ) কাবা থেকে মুক্তিগুলো অপসারণ করেন। দেয়ালে অঙ্কিত ইব্রাহীম (আঃ), ইসমাঈল (আঃ), মারইয়াম (আঃ) এবং ঈসা (আঃ) এর ছবি মুছে দেওয়া হয়। বিজয়ীবীর মুহাম্মদ (সাঃ) সকল নির্যাতন, উৎপীড়ন বিস্মৃত হয়ে ক্ষমা ও করুণার মাহাত্ম্য দিয়ে মক্কাবাসীদের হৃদয় জয় করেন। ঘোর শত্রুদল পরম বন্ধুতে পরিণত হয়। মক্কার নর-নারী দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে।

মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইন্তেকাল

মদিনা শরীফ। সূত্র: ইন্টারনেট

একাদশ হিজরির সফর মাসের শেষ সপ্তাহে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় ১১ দিন ইমামতের দায়িত্ব পালন করার পর তিনি আবু বকর (রাঃ) কে ইমামতের নির্দেশ দেন। একদিন যহরের নামাযের সময় সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতীক্ষায় ছিলেন। তিনি অযু করলেন, কিন্তু দাঁড়াবার সময়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরে পেলে তিনি আবার অযু করেন কিন্তু পুনরায় বেহুশ হয়ে পড়েন। তাঁর তৃতীয়বার সংজ্ঞালোপের পর আবু বকর (রাঃ) নামায শুরু করে দেন। এদিকে তিনি আলী (রাঃ) এবং আববাস (রাঃ) এর কাঁধে ভর দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করেন। আবু বকর (রাঃ) এর পাশে তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হয়। আবু বকর (রাঃ) ইমামের স্থান ত্যাগ করতে উদ্যত হলে তিনি ইঙ্গিতে তাঁকে বারণ করেন এবং এই অবস্থায় তিনি নামায শেষ করেন। নামায শেষে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। এর কয়েকদিন পর ১২ রবীউল আউয়াল সোমবার (মতান্তরে ১ অথবা ২ রবীউল আউয়াল) ৬৩ বৎসর বয়সে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় উচ্চকণ্ঠে তিনি বলে ওঠেন, ‘সালাত, সালাত, সাবধান! দাসদাসীদের প্রতি সাবধান’। পরে শেষ নিঃশ্বাসের সময় তিনি উচ্চারণ করেন, ‘হে আল্লাহ্! শ্রেষ্ঠতম বন্ধু।’

সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *