1. [email protected] : মো: সরোয়ার সরদার : মো: সরোয়ার সরদার
  2. [email protected] : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক
  3. [email protected] : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি
  4. [email protected] : Sadak Mostafa : Sadak Mostafa
  5. [email protected] : বিশেষ প্রতিনিধি : বিশেষ প্রতিনিধি
যেভাবে সিন্ধু জয় করেছিলেন মুহাম্মদ বিন কাসিম | ঢাকা আওয়ার
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

যেভাবে সিন্ধু জয় করেছিলেন মুহাম্মদ বিন কাসিম

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩
  • ১৫১ সময় দর্শন
শিল্পীর কল্পনায় মুহাম্মদ বিন কাসিম

ইমাদউদ্দিন মুহাম্মদ বিন কাসিম আল সাকাফি ছিলেন একজন উমাইয়া সেনাপতি। সিন্ধু নদসহ সিন্ধু ও মুলতান অঞ্চল তিনি জয় করে উমাইয়া খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি তাইফে (বর্তমান সৌদি আরব) জন্মগ্রহণ করেন। তার সিন্ধু জয়ের কারণে মুসলিমদের পক্ষে ভারতীয় উপমহাদেশ বিজয়ের পথ প্রশস্ত হয়।

বিন কাসিম ৭১২ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তৎকালীন রাজা দাহিরকে পরাজিত করে সিন্ধু জয় করেন। দাহির সিন্ধি ব্রাহ্মণ রাজবংশের শেষ শাসক ছিল এবং তারপর সিন্ধু ইসলামি খিলাফতের অংশ হয়। পরাজিত হওয়ার পর দাহিরের শিরশ্ছেদ করা হয় এবং তার মাথা বসরার গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে পাঠানো হয়। মুসলিম বাহিনী সিন্ধুর রাজধানী আরোর দখলের সঙ্গে সঙ্গে মোহাম্মদ বিন কাসিম প্রথম মুসলিম বিজেতা হন, যিনি সফলভাবে ভারতীয় ভূমি দখল করেন।

মুহাম্মদ বিন কাসিম তাইফের সাকিফ গোত্রের সদস্য ছিলেন। তার পিতা কাসিম বিন ইউসুফ তার বাল্যকালে মৃত্যুবরণ করেন। তার চাচা উমাইয়া গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তাকে যুদ্ধবিদ্যা ও সরকার পরিচালনা শিক্ষা দেন। সিন্ধু যাত্রার পূর্বে মুহাম্মদ বিন কাসিম তার চাচাত বোন হাজ্জাজের কন্যা জুবাইদাকে বিয়ে করেন। তার আরেকজন চাচা মুহাম্মদ বিন ইউসুফ ইয়েমেনের গভর্নর ছিলেন। হাজ্জাজের পৃষ্ঠপোষকতায় মুহাম্মদ বিন কাসিম পারস্যের গভর্নর হন।

সিন্ধু অভিযানের কারণ:

প্রথমত: উমাইয়া খলিফা প্রথম ওয়ালিদের রাজত্বকালে সম্প্রসারণবাদের যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, উহাই সিন্ধু অভিযানের অন্যতম কারণ। খলিফা প্রথম ওয়ালিদের সময় রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কারণে ইসলামী সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

দ্বিতীয়ত: মুসলমানদের পারস্য অভিযানকালে ভারতের হিন্দুরাজন্যবর্গ বিশেষ করে সিন্ধুর রাজা পারস্য বাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্যসামন্ত দিয়ে সহায়তা করে। এতে ভারতবর্ষের হিন্দু রাজাদের বৈরী মনোভাব প্রকাশিত হয়। যা পরবর্তীতে মুসলমানদের সিন্ধু অভিযানে বাধ্য করে।

তৃতীয়ত: বহু যুগ আগে হতে সাহসী আরব নাবিকগণ ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ক্রমান্বয়ে তাদের বাণিজ্যিক ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে থাকে। হরমুজবং ও পারস্যের অন্যান্য বন্দর হতে আরব বণিকগণ ভারতের পশ্চিম উপকূল এবং সিংহলে (শ্রীলংকা) সমুদ্র যাত্রা করতো। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অসংখ্য আরব বণিক এ সমস্ত অঞ্চলে বসবাস করতেন। ব্যবসার সম্প্রসারণ এবং ভারতের অফুরন্ত ধনসম্পদ আহরণের জন্য আরবরা সিন্ধু অভিযানে প্রলুব্ধ হয় বলে মনে করা হয়।

চতুর্থত: হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নির্মম অত্যাচার এবং নৃশংসতার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য কিছু ইরাকী বিদ্রোহী সিন্ধুর রাজা দাহিরের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করে। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আশ্রিত বিদ্রোহীদের ফেরত চাইলে দাহির তা প্রত্যাখ্যান করে। এতে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ক্রুদ্ধ হন এবং সিন্ধুর রাজা দাহিরকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য সিন্ধুতে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।

পঞ্চমত: আবরদের সিন্ধু অভিযানের প্রত্যক্ষ কারণ হচ্ছে- সিন্ধুর রাজা দাহিরের সমুদ্র বন্দর দিবালের নিকটে সিন্ধী জলদস্যু কর্তৃক আটটি আরব জাহাজ লুণ্ঠন, সিংহলে ব্যবসা উপলক্ষে অবস্থারনরত কতিপয় বণিকের মুত্যৃ হলে সিংহলের রাজা মৃত কয়েকজন বণিকের বিধবা স্ত্রী ও এতিম পুত্রকন্যাকে প্রাচ্যের (ইরাক) গভর্নর হাজ্জাজের নিকট ৮টি জাহাজে করে বসরায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সঙ্গে আল ওয়ালিদ ও হাজ্জাজের জন্য বহু মূল্যবান উপঢৌকন পাঠান। জাহাজগুলো দিবাল বন্দরের নিকট উপস্থিত হলে জলদস্যুরা জাহাজ ভর্তি উপঢৌকন লুণ্ঠন করে এবং নিহত বণিকদের পরিজনদের বন্দী করে। এ ঘটনার জন্য হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সিন্ধুর রাজা দাহিরকে দায়ী করে এবং অনতিবিলম্বে নিহত বণিকদের পরিবার-পরিজন এবং লুণ্ঠিত ধনসম্পদ ফেরত দেয়ার দাবি জানায়।

সিন্ধু অভিযান
সিন্ধুর রাজা দাহির হাজ্জাজের দাবি প্রত্যাখ্যান করার সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য সিন্ধুতে অভিযান করার সিদ্ধান্ত নেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ প্রথমে উবায়দুল্লাহ এবং পরে বুদায়েলের নেতৃত্বে দুটি অভিযান প্রেরণ করেন। কিন্তু সিদ্ধুতে প্রেরিত প্রাথমিক দুটি অভিযান প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। হাজ্জাজ তার ভাগ্নে ও জামাতা সপ্তদশবর্ষীয় মুহম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে সিন্ধুতে অভিযান করার সিদ্ধান্ত নেন।

মুহাম্মদ বিন কাসিম হাজ্জাজের নির্দেশে ৭১২ খৃস্টাব্দে ৬ হাজার সিরীয় ও ইরাকী যোদ্ধা, ৬ হাজার উষ্ট্রারোহী এবং ৩ হাজার ব্যাকট্রিয় ভারবাহী পশুর সমন্বয়ে গঠিত সুসজ্জিত বাহিনী নিয়ে বাগদাদ থেকে সিন্ধুর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। রায় ও সিরাজ হয়ে তিনি মেকরানে উপস্থিত হলেন এবং তথায় আরব শাসনকর্তা মুহম্মদ হারুন মুহম্মদ বিন কাসিমকে বহু রসদ, অস্ত্রাদি এবং দুর্গ ধ্বংসকারী যন্ত্রাদি সরবরাহ করেন। ৭১২ খৃস্টাব্দে মেকরানে উপস্থিত হওয়ার পর দাহিরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ জাঠ এবং মেঠ সৈন্য কাসিমের সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। অতঃপর কাসিম তার সুসজ্জিত বাহিনী নিয়ে দাহিরের সমুদ্রবন্দর দিবালের দিকে অগ্রসর হন এবং দিবাল বন্দর পদানত করেন। ইতোমধ্যে সমুদ্রপথে অস্ত্রশস্ত্র এবং সৈন্যসামন্ত পৌঁছলে কাসিমের শক্তি বৃদ্ধি পায়। দিবাল সমুদ্রবন্দর পদানত করার পর মুসলিম বাহিনী দিবাল দুর্গের দিকে ধাবিত হয়। দিবাল দুর্গের চতুর্দিকে পরিখা খনন করে মুসলিম সৈন্যগণ অবরোধ শুরু করে এবং বধূ নামে একটি দুর্গ ধ্বংসকারী যন্ত্র স্থাপন করে। মুসলিম বাহিনী বীরবিক্রমে দিবাল দুর্গ আক্রমণ করে এবং হিন্দুবাহিনীকে পরাজিত করে দিবাল দুর্গ অধিকার করে। মুসলিম বাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণে দিবাল দুর্গ ধ্বংস হয়।

দিবালে ৪ হাজার সৈন্যের একটি সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করে কাসিম বর্তমান থাট্টা থেকে হায়দ্রাবাদ সড়কের অদূরে নিরুণ শহরের দিকে অগ্রসর হন। দাহিরের দ্বারা অত্যাচারিত নিরুণ শহরের অধিবাসীগণ মুসলিম অভিযানে বাধাদান করে নাই। ফলে নিরুণ সহজেই অধিকৃত হলো। অতঃপর আরও কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শহর দখল করে কাসিম রাওয়ারে বিপুল রণসম্ভারে সজ্জিত দাহিরের বাহিনীকে মোকাবিলা করলেন। মুসলিম বাহিনী রণহস্তী, পদাতিক এবং অশ্বারোহী বাহিনীর দ্বারা হিন্দুবাহিনীর ওপর প্রচন্ড আঘাত হানলো। অকস্মাৎ যুদ্ধ পরিচালনারত দাহিরের হাওদায় মুসলিম প্রজ্বলিত তীর নিক্ষিপ্ত হলে দাহির ধরাশায়ী হন এবং মুসলিম সৈন্যরা তাকে বন্দী করে শিরশ্ছেদ করে। দাহিরের ভাগ্য বিপর্যয়ের পর তার স্ত্রী রাণীবাঈ এবং তার পুত্র ১৫ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী নিয়ে রাওয়ার দুর্গে অবস্থানপূর্বক মুসলিম আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুসলিম বাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণে রাওয়ার দুর্গ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং মুসলিম বাহিনীর কাছে পরাজয়ের গ্লানি মোচন না করতে পেরে রাণী বাঈ ও তার পরিচালিকাগণ জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে আত্মাহুতি দ্বারা ‘জওহর’ ব্রত পালন করেন। রাওয়ার দুর্গ অধিকৃত হলে বিজয়ী বীর মুহম্মদ বিন কাসিম ব্রাহ্মণ্যবাদের থর জেলার (একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত শহর) দিকে ধাবিত হন। স্থানীয় ব্রাহ্মণগণ সহজেই কাসিমের বশ্যতা স্বীকার করেন এবং তারা জিজিয়া কর দানেও স্বীকৃত হলেন। এরপর আলর ও সর্বশেষে মূলতান ৭১৩ খৃস্টাব্দে মুসলমানদের অধিকারে আসলে সিন্ধু অভিযানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে। এর মধ্যে দিয়ে মুহম্মদ বিন কাসিম প্রথম মুসলিম বীর হিসেবে ভারতবর্ষের সিন্ধুতে অভিযান করে তা দখল করেন এবং মুসলিম শাসনের সূচনা করেন।

সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *