নতুন রাষ্ট্রপতির নামের বানান কে, কীভাবে লিখবে এটা নিয়ে একটা কৌতূহল আছে আমার। কারণ আমরা ব্যক্তির নামের বানানের যত্নশীল নই। যিনি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন তাঁর ফেসবুক প্রোফাইল Md Shahabuddin Chuppu নামে। তিনি নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখতেন মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নামে। একটি প্রভাবশালী দৈনিক তাঁর নাম লিখেছে ‘মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন’ এই বানানে। অপেক্ষায় আছি বঙ্গভবন থেকে কোন বানানটি চূড়ান্ত হয়। চূড়ান্ত বানানটিই যেন আমরা সবাই ফলো করি।
আমি মনে করি, একজন মানুষ যেভাবে পরিচিত হতে চান, সেভাবেই লেখা উচিত। কারও নাম বদলে দেওয়ার অধিকার কোনো গণমাধ্যমেরই থাকা উচিত নয়। কেউ যেন রাষ্ট্রপতির ডাকনাম ছেঁটে না ফেলেন। যে যাই করুক, জনপরিসরে তিনি চুপ্পু ভাই বা চুপ্পু স্যার হিসেবেই পরিচিত।
রাষ্ট্রপতি পদে তার মনোনয়ন বড় চমক বটে, তৃণমূল থেকে রাষ্ট্রপতি বাছাই করার পথেই হাঁটলেন শেখ হাসিনা। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ থেকে উঠে এসেছেন আর হবু রাষ্ট্রপতি এসেছেন পাবনা থেকে।
মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। ছাত্রজীবনে ছিলেন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, পরে হয়েছেন যুবলীগের জেলা সভাপতি। ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। বাকশাল গঠনের পর হয়েছিলেন জেলা বাকশালের যুগ্ম আহ্বায়ক। ৭৫- এর পর বছর তিনেক কারাগারে ছিলেন, সয়েছেন নির্মম নির্যাতন। তাঁর প্রথম পেশা সাংবাদিকতা। ছিলেন, বাংলার বাণীর পাবনা জেলা প্রতিনিধি। এখনো পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য। ৭৫- এর পর কারামুক্ত হয়ে শুরু করেন আইন পেশা।
১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ওই ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করে, যার প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি ছিলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। আরও সর্বশেষ ধরলে, তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন গত ২২ জানুয়ারি।
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও তিনি বরাবরই লো প্রোফাইল বজায় রেখেছেন। পাবনার মাটি ও মানুষের সঙ্গে ছিল তার নিবিড় যোগাযোগ। বিভিন্ন উচ্চপদে আসীন থাকলেও পাবনা গেলে ঘুরে ঘুরে বন্ধুদের খোঁজ নিতেন, পাড়ার দোকানে বসে চা খেতেন। ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। তিনি খুবই মৃদুভাষী, টক শোতেও কথা বলেন মৃদু কণ্ঠে যুক্তি দিয়ে। আমি সৌভাগ্যবান, তিনি আমার ফেসবুক বন্ধুও বটে। রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে, আমি নানাজনকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছি, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা সমালোচনা আছে কিনা। সারা জীবন আওয়ামী লীগ করেছেন, সে কারণেই হয়তো বিএনপি বা আওয়ামী বিরোধী দলগুলো তাঁকে মেনে নেবেন না। এমনিতে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা করার মত কিছু পাইনি।
সারা জীবন একটি আদর্শে অবিচল থেকে লো প্রোফাইলে চলা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এখন, হাই প্রোফাইল মানে এক নম্বর প্রোফাইলের লোক হতে যাচ্ছেন। সারা জীবন তিনি নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। এবার পুরো রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। নিশ্চয়ই তিনি, হাই পারফরম্যান্স দেখাবেন।
লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
Leave a Reply