1. [email protected] : মো: সরোয়ার সরদার : মো: সরোয়ার সরদার
  2. [email protected] : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক
  3. [email protected] : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি
  4. [email protected] : Sadak Mostafa : Sadak Mostafa
  5. [email protected] : বিশেষ প্রতিনিধি : বিশেষ প্রতিনিধি
শত আলেমের জীবনী: মাওলানা হাজী শরীয়তুল্লাহ | ঢাকা আওয়ার
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৯:৪২ অপরাহ্ন

শত আলেমের জীবনী: মাওলানা হাজী শরীয়তুল্লাহ

প্রতিবেদকের নাম
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০
  • ২৮৩ সময় দর্শন

পর্ব-২

বাংলাদেশের বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার শিবচর থানার বাহাদুরপুরের সন্নিকটস্থ শামাইল গ্রামে আবদুল জলিল তালুকদার নামে একজন প্রতাপশালী জমিদার বাস করতেন। সৎ, সাধু, অমায়িক, প্রজাহিতৈষী ও প্রজাদরদী জমিদার হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুনাম সুখ্যাতি ছিল। অন্য জমিদার তালুকদারদের মতো তিনি প্রজা নিপীড়ক ছিলেন না। সবাই তাঁকে সম্মান সমীহ করতো, সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতো। এই প্রজাহিতৈষী প্রজাদরদী আবদুল জলিল তালুকদারদের ঔরসেই ১৭৮০ ঈসাব্দে উপমহাদেশের খ্যাতিমান মুজাহিদ আলেম হযরত হাজী শরীয়তুল্লাহ রহ. জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর এক বোনও ছিলেন। এ দু’জনকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক রেখেই আবদুল জলিল তালুকদার ইন্তেকাল করেন। মুহাম্মদ আশেক ও মুহাম্মদ আযিম নামে আবদুল জলিল তালুকদারের দু’ভাই ছিলেন। মুহাম্মদ আশেক ছিলেন একজন দক্ষ আলেম এবং  ‍মুর্শিদাবাদের নবাব দরবারের মুফতী। তিনি সপরিবারে মুর্শিদাবাদে অবস্থান করতেন। মুহাম্মদ আযিম সাংসারিক কাজকর্ম এবং জমিদারী দেখাশোনায়ই ব্যস্ত থাকতেন।

বালক শরীয়তুল্লাহ একবার চাচা মুফতী আশেক সাহেব ও চাচীর সাথে নৌকায় চেপে শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে আসছিলেন। গঙ্গা নদীতে এসে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাডুবি ঘটে। এ দুর্ঘটনায় মুফতী আশেক সাহেবের সস্ত্রীক সলিল সমাধি ঘটে। আল্লাহ তাআলার অসীম রহমতে বালক শরীয়তুল্লাহ বেঁচে যান। বাল্যকালের এ ঘটনা যেন ছিল বালক শরীয়তুল্লাহর ভাবী সংগ্রামমুখর জীবনেরই ইঙ্গিত।

শিক্ষা জীবন: পিতা আবদুল জলিল তালুকদারের মৃত্যুর পর বালক শরীয়তুল্লাহ ও তাঁর একমাত্র বোন চাচা মুহাম্মদ আযিমের তত্ত্বাবধানে লালিত পালিত হন। মুহাম্মদ আযিমের কোনো সন্তান ছিল না। তাই তিনি এতীম ভাতিজা ভাতিজীকে পরম আদরে বড় করে তোলেন। বালক শরীয়তুল্লহ বাড়িতেই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশে কলিকাতায় গমন করেন। সেখানে সমকালীন প্রখ্যাত বুযুর্গ আলেম হযরত মাওলানা বাশারত আলী রহ. এর কাছে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে থাকেন। বালক শরীয়তুল্লাহর লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ এবং উন্নত চরিত্র বৈশিষ্ট্য দেখে তাঁর শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি হযরত মাওলানা বাশারত আলী রহ. বিশেষ খেয়াল রাখতেন। শিক্ষার্জনের উদ্দেশে কলিকাতায় থাকাকালেই ফাঁকে ফাঁকে তিনি মুর্শিদাবাদে অবস্থানরত নবাব দরবারের মুফতী তাঁর চাচা হযরত মাওলানা আশেক সাহেবের কাছে যাওয়া আসা করতেন। এখান থেকেই ফরিদপুরের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পথে মুফতী আশেক সাহেব সস্ত্রীক গঙ্গা নদীতে ডুবে মারা যা্রয়ার পর মনের দুঃখে হাজী শরীয়তুল্লাহ গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে কলিকাতায় ফিরে যান এবং মহানুভব উস্তাদ হযরত মাওলানা বাশারত আলী রহ. কে এ ঘটনা অবগত করান। তিনি শরীয়তুল্লাহকে সান্ত্বনা দিয়ে ধৈর্যের সাথে পড়ালেখায় মনোযোগ আরোপের উপদেশ দেন। কিছুদিন পর বালক শরীয়তুল্লাহ হযরত মাওলানা বাশারত আলী রহ. এর  সাথে মক্কা মোকাবররমায় গমন করেন। উল্লেখ্য, তিনি নানা কারণে মক্কা মোকাররমায় হিজরতের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হাজী শরীয়তুল্লাহ রহ. এ যাত্রায় দীর্ঘ বিশ বছরকাল মক্কা শরীফে অবস্থান করে সেখানকার বিভিন্ন আলেমের কাছে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। মক্কা শরীফের দীর্ঘ বিশ বছরের শিক্ষা জীবন শেষে তিনি একজন সুদক্ষ আলেমে দীন হিসাবে খ্যাত হন এবং খেখানেই শিক্ষাকতায় নিয়োজিত হন। তখন তাহের সম্বলী নামে উপমহাদেশের একজন আলেম মক্কা শরীফে বসবাস করছিলেন। সর্বসাধারণ্যে তিনি ছোট আবু হানিফা নামে খ্যাত ছিলেন। হাজী শরীয়তুল্লাহ এ বুযুর্গ আলেমের কাচেই বাইয়াত হন এবং আত্মশুদ্ধির অনুশীলনে উচ্চতর যোগ্যতা লাভ করে স্বদেশে ফিরে আসেন। এ সময় তাঁর চাচা আযিম তালুকদার জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে পড়েছিলেন।

বাংলাদেশের ডাক টিকিটে হাজী শরীয়তুল্লাহ

আন্দোলন সংগ্রাম: সেকালে বৃটিশ ঔ্যপনিবেশিক শাসন কবলিত এদেশের সর্বশ্রেণীর মুসলমানের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং দীনী অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। হিন্দু জমিদার, সামন্ত ভূস্বামী এবং বৃটিশ নীলকরদের সম্মিলিত অত্যাচারে মুসলমানদের দুর্দশা চরম তেকে চরমে উপনীত হয়। উপরন্তু অৈর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক দুর্দশা কবলিত মুসলিম সমাজ দিন দিন েইসলামী জীবনাচার ও ইসলামী জীবনব্যবস্থা থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এর ফলে তাদের সমাজিক জীবনাচারে শিরক, বিদআত ও নানা প্রকার অনৈসলামিক ব্যবস্থা অনুপ্রবেশ করে তাদের ইসলাম থেকে সরিয়ে গোমরাহীতে নিমজ্জিত করে।

মুসলমানদের দীনবিমুখতা, চরিত্রহীনতা, অনৈসলামিক জীবনাচার ও সংস্কৃতিতে আচ্ছান্নতা দেখে হাজী শরীয়তুল্লাহ মনে যারপরনাই ব্যথা অনুভব করেন। তিনি মুসলমানদের পুনরায় শিরক বিদআতমুক্ত নির্ভেজাল ইসলামী জীবনে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বনে চেষ্টা চালাতে থাকেন। কিন্তু মুসলমানদের েইসলামী জীবনাচারের প্রতি অনাগ্রহ হাজী শরীয়তুল্লাহকে অত্যন্ত বিচলিত করে তোলে। তিনি পুনরায় মক্কা শরীফে ও মদীনা শরীফে গমনের ইচ্ছা করেন। এবার তিনি পায়ে হেঁটেই মক্কা-মদীনার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এ যাত্রায় প্রথমে বাগদাদে গমন করে ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ত্যাগী বীর পুরুষদের স্মৃতিবিজড়িত করবালা ময়দান, ইমাম হোসাইন (রা.) ও নবী পরিবারের অন্য সদস্যদের শাহাদাতের স্মৃতিবিজড়িত করাবালা ময়দান, ইমাম হোসাইন (রা.) এর মাজার এবং হযরত সাইয়েদ আবদুল কাদের জিলানী রহ. এর মাজার জিয়ারত করেন। এরপর তিনি বায়তুল মোকাদ্দাস ও মিসর সফর করে সেখানকার জীবিত আল্লাহওয়ালাদের সাথে দেখা করে তাঁদের দোয়া ও বরকত হাসিল করেন, মৃতদের মাজার জিয়ারত করেন। মিসর থেকেও তিনি পায়ে হেঁটেই মক্কা মোকাররমায় এসে হজ সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি সেখানে অবস্থানরত তাঁর শায়খ হযরত তাহের সম্বলীর সাথে সাক্ষাত করে তাঁর দোয়া নেন। এরপর মদীনা তাইয়েবায় উপস্থিত হন এবং দু’বছর পর্যন্ত এখানে জিয়ারত-মোজাহাদা, ইবাদত যিকির শোগলে রত থাকেন। এবার মদীনা তাইয়েবায় অবস্থানকালে তিনি হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওযার কাছেই অধিক সময় কাটাতেন। এ সময় তিনি উপর্যুপরি তিন বার স্বপ্নে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জিয়ারত লাভ করেন। তিনি তাঁকে দেশে ফিরে ইসলামের প্রচার প্রসার ও সংস্কার আন্দোলন পরিচালনার নির্দেশ দেন। এ স্বপ্ন দেখে তিনি মক্কা শরীফে গিয়ে তাঁর শায়খ হযরত তাহের সম্বলী রহ.-এর কাছে পুরো বৃত্তান্ত খুলে বলেন। এতে শায়খ অত্যন্ত খুশি হয়ে তাঁকে খেলাফত দান করে দেশে ফিরে ইসলামের প্রচার ও সংস্কার আন্দোলন প্ররিচালনায় নিয়োজিত হওয়ার নির্দেশ দেন।

স্বপ্নযোগে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ এবং নিজের শায়খের নির্দেশে দেশে ফিরে এসে তিনি ইসলাম প্রচার ও সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। বাংলা ও আসামের বিরাট এলাকা জুড়ে তাঁর ইসলাম প্রচার ও সংস্কার আন্দোলন ব্যাপক সাড়া জাগায়। তিনি শিরক বিদআতমুক্ত নির্ভেজাল ইসলামের প্রাণসত্তা মানুষের সামনে তুলে ধরেন। তাঁর এ আন্দোলন ফরায়েজী আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে। দলে দলে মানুষ তাঁর আন্দোলনে যোগ দিয়ে শিরক বিদআত ও অনৈসলামিক সংস্কৃতি ত্যাগ করতে থাকে। মুসলমানদের মাঝে ইসলামের বিপ্লবী চেতনা জেগে উঠে। ফলে ইসলামের প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্বের পথে পরাধীনতার মহাপ্রাচীরের উপর মুসলমানদের দৃষ্টি পতিত হয় এবং তারা নিজেদের যাবতীয় দুঃখ দুর্দশার জন্য বিদেশী ঔপনিবেশিক বৃটিশ শাসক ও তাদের এ দেশীয় দোসর বশংবদদের দায়ী করতে শেখে। তারা ঔপনিবেশিক ইংরেজ সরকার ও তাদের এ দেশীয় দোসর বশংবদ হিন্দু জমিদার তালুকদার সমন্ত ভূস্বামীদের জুলুম নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

হাজী শরীয়তুল্লাহ ১৮১৮ ঈসাব্দে মক্কা শরীফ থেকৈ দেশে ফিরেই ইসলাম প্রচার ও সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেন। এ আন্দোলনের সূচনাতেই হযরত শাহ আবদুল আযীয দেহলভীর পূর্বঘোষিত ফতোয়া অনুসরণে তিনি ভারতকে দারুল হরব (অমুসলিম শাসিত দেশ) ঘোষণা করেন। এ ঘোষণায় তিনি বলেন, অমুসলিম শাসিত হওয়ার কারণে এ দেশে মুসলমানরা পুরোপুরিভাবে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতে পারে না। ইসলামী পরিবেশ নাই বিধায় এখানে জুমা এবং ঈদের নামাযও বিধিসম্মত নয়। তাঁর এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিদেশী দখলদার শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র খ্ষোভ ও বিদ্ধেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এ ঘোষণার সারমর্ম হচ্ছে, বিদেশী শাসনের উপস্থিতিতে এ দেশে যথাযথভাবে ইসলামী অনুশাসন, ইসলামী বিধান মেনে চলা কোনো প্রকারেই সম্ভব নয়। তাই ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে মুসনলমানেদের আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাকতে হবে। ইংরেজ শাসনে থেকে তাদের বিরুদ্ধে এমন ঘোষণা উচ্ছারণ খুব সহজ বিষয় ছিল না, ক্নিতু আল্লাহর পথের পথিক হাজী শরীয়তুল্লাহ ইসলাম ও মুসলমানদের সার্বিক কল্যাণ সাধনে যে কোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিলেন। প্রস্তুত ছিলেন জেল জুলুম বরণসহ যে কোনো পরিণতির জন্য। ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে এমন সাহসী ঘোষণা উচ্চারণ ব্যতীত ইসলাম ওমুসলমাদের কল্যণে গৃহীত কোনো উদ্যোড় পদক্ষেপই ফলপ্রসূ হবার ছিল না, তাই তিনি সঠিক পন্থাই গ্রহণ করেন। ফলে তাঁর সূচিত আন্দোলন মুসলমানদের মাঝে বিপুল সাড়া জাগায় এবং মুসলমানরা দলে দলে হাজী শরীয়তুল্লাহর ফরায়েজী আন্দোলনে যোগ দিতে থাকে।

হাজী শরীয়তুল্লাহ

ইংরেজ শাসন কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিপ্লবী ঘোষণা উচ্চারণের সাথে সাথে তিনি সমাজ সংস্কারেও মনোযোগ দেন। দীর্ঘকাল বহু ঈশ্বরবাদী পৌত্তলিক হিন্দুদের সাথে সহাবস্থানের ফলে মুসলমানদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে বহু হিন্দুয়ানী রীতিনীতি এবং সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটে, যার সবই ছিল ইসলাম আকীদা বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। এর সাথে সাথে তিনি শিরক বিদআত, মুসলমান পীর ফকিরদের মাজারে সেজদা করা, তাদের নামে মানত করা, শিরনি দেওয়া, মহররম মাসে কারবালার শহীদদের দুঃখজনক স্মৃতি স্মরণে তাজিয়া মিছিল বের করা, হিন্দুদের পূজা পার্বণে, ধর্মীয় উৎসবে, গান-বাজনার অনুষ্ঠানে মুসলমানদের যোগদান ইসলমের প্রাণসত্তা বিরোধী বলে ঘোষণা করে এসব থেকে তাদের বিরত থাকার আহ্বান জানান। তিনিই সর্বপ্রথম এ দেশে গোষণা করলেন, মুসলমান পীর ফকির ও আলেম উলামার মর্যাদা একজন শিক্ষকের চেয়ে বেশি কিছু নয়। অথচ তাঁর এ ঘোষণার আগে এ দেশে সর্বসাধারণ মানুষের বিশ্বাস ছিল, পীর ফকির ও আলেমরা আল্লাহ তাআলার দরবারে সুপারিশ করে তাদের অনুসারীদের জান্নাতে পৌঁছে দেবেন। এহেন ধারণার কুফলস্বরুপ মুসলমানরা আমলবিমুখ হয়ে পড়েছিল।

তিনি ঘোষণা করলেন, মুসলমানরা একমাত্র আল্লাহ তাআলাকেই ভয় করবে, অন্য কাউকে নয়; সে যত বড় শক্তিই হোক। তারা সর্বাগ্রে আললাহ তাআলা নির্দেশিত ফরয কর্তব্যসমূহ অধিক গুরুত্ব সহকারে আদায় করবে। মুসলমানদের ফরয কর্তব্যসমূহ অধিক গুরুত্ব সহকারে আদায় করবে। মুসলমানদের ফরয কর্তব্যসমূহ সর্বাগ্রে আদায়ের উপর জোর দেওয়ার কারণে তাঁর আন্দোলন ফরায়েজী আন্দোলনের মাঝে বিদেশী দখলদার ইংরেজ শাসক, তাদের এ দেশীয় দোসর বশংবদ হিন্দু জমিদার তালুকদার, সমন্ত ভূস্বামী এবং সুদখোর মহাজনদের অত্যাচার নির্যাতন তেকে মুক্তির আলোকশিখা দেখতে পেয়ে দলে দলে তাতে যোগদান করতে থাকে। অবশেষে হাজী শরীয়তুল্লাহ রহ.-এর পরিচালিত ফরায়েজী আন্দোলন বিদেশী ইংরেজ শাসক ও তাদরে দেশীয় দোসর বশংবদ বিরোধী আন্দোলনের রুপ পরিগ্রহ করে।

হাজী শরীয়তুল্লাহ রহ. ইসলাম প্রচার ও সংস্কার এবং বৃটিশ শাসন বিরোধী আন্দোলন চালাতে গিয়ে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁর আন্দোলনের বিস্তৃতি ও শক্তি বৃদ্ধিতে বৃটিশ শাসক এবং তাদের দোসর সহযোগীদের মাঝে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। বৃটিশ শাসক ও তাদের দেশীয় দোসর সহযোগীরা হাজী শরীয়তুল্লাহ রহ. এবং তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার শুরু করে। তারা অপপ্রচার করতে থাকে – হাজী শরীয়তুল্লাহ ও তাঁর অনুসারীরা হিন্দুদের দেবদেবীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছেন, তাদের বসতবাড়িতে চড়াও হয়ে লুণ্ঠন করছেন ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, তারা বৃটিশ সরকারের আাাদালতে হাজী শরীয়তুললাহ ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মিথ্যা মামলা রুজু করে তাঁকে হেয় করার এবং তাঁর পরিচালিত আন্দোলন দমানোর অপপ্রয়াস চালায়।

ইন্তেকাল: সংগ্রামী বীর হাজী শরীয়তুল্লাহ ১৮৪৩ ঈসাব্দের ১৬ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শরীয়তপুরেই তাঁকে দাফল করা হয়। পরবর্তীকালে নদী ভাঙ্গন কবলিত হয়ে তাঁর কবরের কোনো চিহুই অবশিষ্ট থাকেনি।

সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *