মুইদুজ্জামান মাহিম হার না মানা এক তরুণ উদ্যোক্তা। নিজ প্রচেষ্টা, হার না মানা মনোবল ও সীমাহীন পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বেকারত্ব সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে। করোনা মহামারীর মধ্যে মানুষ যেখানে নিজ কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে হিমসিম খাচ্ছিল, চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ছুটে বেড়িয়েছে, সেখানে একদম নতুন একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করা এবং সেই কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ ছিলো না। সেই কঠিন পথ মাড়িয়ে মাহিম গড়ে তুলেছে সফটওয়্যার কোম্পানি ‘সিকিউর এম্বিট (Secure Ambit)’।
মুইদুজ্জামান মাহিম তার নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, তিনি বাংলাদেশের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক পাস করেন। ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নকালীন সময় ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ পান এবং মালয়েশিয়ার পুত্রাজায়ায় অবস্থিত ইউনিভার্সিটি টেনেগা ন্যাশনাল (ইউনিটেন) থেকে সিস্টেম এন্ড নেটওয়ার্কিং এর উপর অতিরিক্ত কোর্স করার সুযোগ পান। ভার্সিটিতে থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশি বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানির সাথে তিনি তাদের বিভিন্ন প্রজেক্ট এ কাজ করেন।
সিকিউর এম্বিট (Secure Ambit) এর প্রতিষ্ঠাতা মাইদুজ্জামান মাহিম তার উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুর দিকের গল্প শোনাতে গিয়ে জানান, ইউনিভার্সিটি লাইফের দ্বিতীয় বর্ষ থাকাকালীন সময়ের কথা। যে সময়ে অন্যান্য বন্ধুরা আড্ডা দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, সে সময়টাই আমি ব্যস্ত থাকতাম কিভাবে নিজের কাজের দক্ষতাকে বাড়ানো যায়। সে সময় থেকেই আমার একটা টার্গেট ছিল নিজের একটি সফটওয়্যার কোম্পানি গড়ে তুলবো। সে সময়ে বিভিন্ন কারণে আমার জন্য কোম্পানি শুরু করাটা অনেকটাই চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি কিছু সুযোগও ছিল। তবে আমি সে সময়ে একটা ই-কমার্স ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকায় এদিকে মনোযোগ দেয়া হয়ে উঠছিল না। তারপর ধীরে ধীরে সেই ই-কমার্স ব্যবসা বাদ দিয়ে নিজের সফটওয়্যার কোম্পানি ‘সিকিউর এম্বিট (Secure Ambit)’ শুরু করি।
‘সিকিউর এম্বিট (Secure Ambit) ’ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও হিসেবে বর্তমানে মুইদুজ্জামান মাহিম দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের সফটওয়্যার কোম্পানি বর্তমানে ১৫ জনের একটি রিমোট টিম কাজ করছেন। এই সফটওয়্যার কোম্পানির টিমের প্রতিটা সদস্য তাদের নিজেদের সেক্টরে বিশেষভাবে পারদর্শী। কোম্পানিটি এখন চার ধরনের প্রজেক্ট ভিত্তিক সার্ভিস দিয়ে থাকেন।
ক. ওয়েব এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট
খ. মোবাইল এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট
গ. ইউআই/ইউএক্স ও ব্রান্ডিং ডিজাইন এবং
ঘ. স্যোসাল মিডিয়া মার্কেটিং
প্রতিটি সেক্টরে তাদের আছে নিজস্ব দক্ষ টিম। কোম্পানিটি তাদের দক্ষ কর্মীদের নিয়ে সফলতার সাথে এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে নিজের ব্রান্ডিং এ বিভিন্ন প্রডাক্ট মার্কেটে নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মুইদুজ্জামান মাহিম জানান, এই স্বল্প সময়ে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে পরিশ্রম এবং আমার পরিবারের বিশেষ সাপোর্টের কারণে সফল প্রতিষ্ঠানে রুপ নিয়েছে ‘সিকিউর এম্বিট’। ‘সিকিউর এম্বিট’ আগামীতে আইটি সেক্টরে দক্ষ ব্যক্তিদের কমসংস্থানে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ। পরিশ্রম গুলো যখন সফলতার রূপ নিতে শুরু করে তখন কষ্টগুলো অনেকটাই লাঘব হয়ে যায়। ‘সিকিউর এম্বিট’ এর প্রতিটা সদস্যের শত নির্ঘুম রাত প্রতিষ্ঠানের এক একটা সফলতার সিঁড়ি তৈরি করে ‘সিকিউর এম্বিট’কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, বাংলাদেশে রয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ তরুণ জনগোষ্ঠী। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তরুণরা যত বেশি পড়ালেখা করছে, তাদের তত বেশি বেকার থাকার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আঞ্চলিক কর্মসংস্থান নিয়ে এক প্রতিবেদনেও এই চিত্র উঠে এসেছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে মুইদুজ্জামান মাহিমদের মত সফল উদ্যোক্তারা দেশের জন্য আশার আলো হয়ে জ্বলে উঠছে। তাদের গল্পগুলো কাগজের পাতায় হয়তো খুব ছোট্ট পরিসরেই লিখে শেষ করা যায়। কিন্তু নিজের জীবনে এই ছোট্ট গল্পের বাস্তব প্রতিফলন যে কত কঠিন সেটা কেবল একজন তরুণ উদ্যোক্তাই উপলব্ধি করতে পারেন।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ এর হিসাব বলছে, দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুযায়ী, দেশে শ্রমশক্তির মোট পরিমাণ ৫ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে কাজ করছে ৫ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার জন। এর অর্থ বেকারের সংখ্যা মাত্র ২৬ লাখ ৮০ হাজার। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। অর্থাৎ প্রতি দুইজনে একজনের নাম বেকারের খাতায় অন্তর্ভূক্ত। তরুণ শিক্ষিতদের জন্য এমন এক ভয়াবহ সময়ে কিছু তরুণ তাদের নিজের জন্যই শুধু না, অন্যদের কর্ম সংস্থান করে দিতে উদ্যোক্তাদের তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন। এমনই এক তরুণ হলেন ‘সিকিউর এম্বিট’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মুইদুজ্জামান মাহিম।
Leave a Reply