1. [email protected] : মো: সরোয়ার সরদার : মো: সরোয়ার সরদার
  2. [email protected] : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক : ঢাকা আওয়ার ডেস্ক
  3. [email protected] : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি : আসিফ অনিক, খুবি প্রতিনিধি
  4. [email protected] : Sadak Mostafa : Sadak Mostafa
  5. [email protected] : বিশেষ প্রতিনিধি : বিশেষ প্রতিনিধি
ফিরে দেখা ইরানের ইসলামী বিপ্লব | ঢাকা আওয়ার
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন

ফিরে দেখা ইরানের ইসলামী বিপ্লব

প্রতিবেদকের নাম
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯
  • ৩৬৯ সময় দর্শন

মো: সরোয়ার সরদার

দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী একটি দেশ ইরান। বিশ্বের সবচেয়ে পর্বতময় দেশগুলিরও একটি ইরান। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় সবাই মুসলিম। খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডারের দিক থেকে ইরান বিশ্বের অন্যতম।

বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে ঘটে যায় ইরানের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা বিশ্বের কাছে ইরানের ইসলামী বিপ্লব, ইরানী বিপ্লব আবার ১৯৭৯ সালের বিপ্লব নামেও পরিচিত। এ বিপ্লবের মাধ্যমেই ইরান পাশ্চাত্যপন্থি দেশ থেকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। ইরানী বিপ্লব ইতিহাসের পাতায় ফরাসি এবং বলশেভিক বিপ্লবের পর তৃতীয় মহান বিপ্লব হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে।

ইরানের শাহ বংশ:

ইরানের শাহ বংশ আড়াই হাজার বছর ধরে প্রভাব প্রতিপত্তি সহকারে রাজত্ব করে আসছিলো দেশটিতে। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো, ঐতিহ্যবাহী আর প্রভাবশালী শাহী রক্তের ধারক ছিলেন ইরানের শেষ সম্রাট মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভী। শাহ বংশ গত আড়াই হাজার বছর ধরে সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলো। যার শুরু হয়েছিল রেজা শাহ পাহলভীর পূর্বপুরুষ মহান কুরুশের মাধ্যমে। আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে।

বিপ্লবের কারণ:

ইরানের শাহ বংশের সর্বশেষ শাসক রেজা শাহ পাহলভী। তিনি ইরানের শাসক হিসেবে সিংহাসনে বসেন ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪১ সালে। সে সময়ে পৃথিবীতে টিকে থাকা সবচেয়ে প্রাচীন বংশের শাসক হিসাবে আবিভূত হলেন রেজা শাহ পাহলভী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইরানে একের পর এক প্রাকৃতিক সম্পদের খনি আবিস্কার হতে থাকে, যার মধ্যে বেশির ভাগই ছির জ্বালানি সম্পদ। রেজা শাহ পাহলভী দেশটিতে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদের খনি বিশেষ করে তেলর খনি গুলোতে মার্কিন ও ব্রিটিশ কত্বিত্ব প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। ইরানে এত এত তেল সম্পদ আবিষ্কারের পেছনে ব্রিটিশ বিভিন্ন কোম্পানির ভূমিকা ছিল। যার ফলে যত তেলের খনি আবিষ্কার হয়েছে, তার অধিকাংশের মালিকানা ব্রিটিশদের হাতে ছিল।

ইরানের প্রাকৃতিক সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিকট রেখে শাহ পরিবার ভোগ বিলাসে নিজেদের মিলিয়ে দেয়। ইরানের নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে পশ্চিমা সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে থাকে। এছাড়া দেশটির আচার অনুষ্ঠানেও পশ্চিমা সংস্কৃতি প্রভাব দিন দিন স্পষ্ট হতে থাকে। শাহ নিজেও ছিলেন পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত। তার স্ত্রী, সন্তানরাও পশ্চিমা ধাঁচে চলতেন। শাহ এবং তার স্ত্রী সকল রাজকীয় অনুষ্ঠান এবং দেশী বিদেশি সরকারি অনুষ্ঠানসমূহে পশ্চিমাদের পোশাক পড়তেন। এসব কারণে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ দিনকে দিন ফুঁসে উঠতে থাকেন। এতে শাহ বংশের প্রতি ইরানিদের মধ্যে বাড়তে থাকে ক্ষোভ। ঠিক এই সময়টিতে মোসাদ্দেক নামক জনপ্রিয় এক রাজনৈতিক নেতা দেশের সব তেল সম্পদ জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। যেহেতু আগেই মোসাদ্দেক তার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে ইরানের তেল সম্পদকে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দিয়েছিল এবং তা বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে প্রচুর অর্থ গুনতে হবে। তাই মোসাদ্দেকের এ জয় মেনে নিতে পারেনি তৎকালীন ক্ষমতাশালী যুক্তরাজ্যের উইন্সটন চার্চিল ও যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি ট্রুম্যান।

অপারেশন এ্যাজক্স

শুরু হলো মুসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করার নীল নকশা। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’ এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা ‘এসআইএস’ লন্ডনে বসে যৌথ পরিকল্পনা করলো। প্রেসিডেন্ট থিউডর রুজভেল্টের নাতি কার্মিট রুজভেল্ট তখন সিআইএ প্রধান। তিনি উড়ে এলেন লন্ডনে। প্রণীত হলো অপারেশন ‘এ্যাজাক্স’এর নীল নকশা। পরিকল্পনা মতে ইরানী সেনাবাহিনীতে ঘটানো হলো অভ্যুত্থান। মোসাদ্দেককে পদত্যাগ করিয়ে ইরানের ক্ষমতা গ্রহণ করেন সেনাপতি ফজলুল্লাহ জাহেদী। তবে তখনো ইরানের মূল শাসন ক্ষমতা ইরানের রাষ্ট্রপ্রধান রেজা শাহ পাহলভীর হাতেই আছে।

এ ঘটনার পর ইরানে অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠা মোসাদ্দেককে আটক করা হয়। এতে দেশটির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন একরকম স্থগিত হয়ে যাচ্ছিলো।
ঠিক সেই মুহূর্তে, সেনা অভ্যুত্থানের পরদিনই সেনাবাহিনীতে আরেকটি কাউন্টার অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে। এ অভ্যুত্থানে মোসাদ্দেককে উদ্ধার করা হয়। এতে ভয় ও শংকায় ইতালিতে পালিয়ে যায় রেজা শাহ পাহলভী।

এ ঘটনার পর আবারও সিআইএ (CIA) ও এসআইএস (SIS) এর পরিকল্পরা অনুযায়ী আবারো উত্থানের চেষ্টা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দু’দিন পর আবারো সেনাবাহিনীতে বিপরীত অভ্যুত্থান ঘটাতে সক্ষম হয় সিআইএ ও এসআইএস । যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সহায়তায় শাহ পাহলভী আবার ফিরে আসে ইরানে। এভাবে ইরানের পার্লামেন্টারি নিয়মে দেশের সম্পদ জাতীয়করণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সহযোগিতায় শাহ পাহলভীর শাসন আবারো সুদৃঢ় হয়।

চূড়ান্ত বিপ্লবের দিকে ইরান:

ক্ষমতা নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় শাহ এবার ইরানের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখে ইরানে শাহ বংশের প্রভাব প্রতিপত্তি আবারো বাড়াতে চেষ্টা করেন। কিন্তু শাহ পুরোপুরি ভাবে হয়ে উঠেছিলেন পশ্চিমা সংস্কৃতি ভাবধারার। সে সময় ইরানে ধীরে ধীরে পশ্চিমা সংস্কৃতি, আচার আচরণ, অভ্যাস প্রভাব ফেলতে শুরু করে। মুসলিম ভাবধারার ইরানে যা হয়ে উঠেছিলো বিভীষিকাময়।

মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম ভাবে আঘাত হানতে শুরু করে রেজা শাহ পাহলভী ও তাদের পরিবার। পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সকল ধরণের অনুষ্ঠানে পশ্চিমা নিয়মনীতি ব্যাবহার করা শুরু হলে মুসলমানরা তার প্রতিবাদ করতে আবার রাস্তায় ফিরে আসে শাহ পাহলভীর বিরুদ্ধে।

১৯৭৯ সালে ইরানের মুসলিম বিপ্লবের অন্যতম কারণ ইরানে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব। ধীরে ধীরে এ আন্দোলন হয়ে উঠে পশ্চিমা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মুসলিম ধর্মীয় সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলন।

আয়াতুল্লাহ খোমেনী:

এমন সময় ইরান থেকে নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনীর পুনরায় আবির্ভাব ঘটে। ইরানের এক স্বনামধন্য মসজিদের ইমাম ছিলেন তিনি। শাহ পাহলভী পশ্চিমা নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় ১৯৬৩ সালে ‘হোয়াইট রিভ্যুলেশানের’ মাধ্যমে খোমেনীকে শাহ পাহলভী গ্রেপ্তার করে নির্বাসনে প্রেরণ করে। দীর্ঘ পনের বছর নির্বাসনে থাকার পর খোমেনী আবার ইরানে ফিরে আসেন শাহ পাহলভীর বিরুদ্ধে বিপ্লবের ডাক দিয়ে। আয়াতুল্লাহ খোমেনী শাহ পাহলভীর বিরুদ্ধে ১৯৭৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সমাবেশের ডাক দেন ইরানের তেহরানে।

ব্ল্যাক ফ্রাইডে:

রেজা শাহ পাহলভী ভাবতেই পারেনি বিপ্লব এমন আকার ধারণ করতে পারে। আয়াতুল্লাহ খোমেনী নির্বাসন থেকে ইরাকের পবিত্র নাজাফ শহরে একটি জনসভা আহ্বান করেন। এতে লাখ লাখ লোক অংশগ্রহণ করেন। এতে শাহের সরকার প্রথমে এই বিশাল সমাবেশকে মোটেই গুরুত্ব দিলেন না। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকলো দ্রুত। শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে বিক্ষুদ্ধ মুসলমানেরা নেমে এলো তেহরানের রাস্তায়। সংখ্যায় ছিলো তারা অগণিত। সেদিন ছিলো শুক্রবার। জুমার নামাজের পর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ লোক তেহরানে জমায়েত হয়। তারিখটি ছিলো ১৯৭৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। শাহের বাহিনী বিশাল জনসমাবেশের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। খোমেনী শিয়া মতাবলম্বী হলেও এই সমাবেশে শিয়া সুন্নি সকলে শাহ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আয়াতুল্লাহ খোমেনীর নেতৃত্বে জড়ো হয় ইরানের তেহরানে। পাহলভী দিশেহারা হয়ে পড়ে। বিশাল জনসমাবেশ প্রতিহত করতে শাহ পাহলভীর বাহিনী নির্বিচারে গুলি শুরু করে বিপ্লবী কর্মীদের উপর। অসংখ্য মানুষ হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের জন্যে ইরানের ইতিহাসে এ দিনটি কুখ্যাত Black Friday নামে আজো স্মরণ করা হয়।

সেদিনের মত শাহ বিপ্লবীদের দমন করতে সক্ষম হন। প্রাথমিক ভাবে বিপ্লব স্তিমিত হয়ে যায়। সম্পূর্ণ ইরানে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করতে শুরু করে। আয়াতুল্লাহ খোমেনী অভ্যন্তরে চূড়ান্ত বিপ্লবের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। দীর্ঘকালের চলমান রাজতন্ত্রের অবসান করার পক্ষে, ইরানে পশ্চিমা সংস্কৃতির বিপক্ষে, ইরানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রভাব মুক্ত করে ইরানকে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র তৈরির পক্ষে জনমত সৃষ্টি করে। শাহ পাহলভী মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন বিপ্লব আর সম্ভব নয়। এরই মধ্যে খোমেনী ইরাক থেকে প্যারিসে পারি জমান। সেখান থেকেই ৩ মাস অভ্যন্তরীণ প্রচারণা চালান। খোমেনী প্যারিসের এক গ্রামে অবস্থান করেছিলেন তখন।

গণ অভ্যুত্থান

১৬ জানুয়ারি ১৯৭৯। মাত্র একদিনের গণঅভ্যূত্থানে শাহের পতন হয়। আয়াতুল্লাহ খোমেনী আবার শাহের বিরুদ্ধে এক গণ অভ্যুত্থানের ডাক দেন। ইতিহাসে এমন গণ অভ্যুত্থানের খুব একটা নজির নেই। লাখ লাখ জনতা ইরানের রাস্তায় চলে আসে। এটি ছিল ব্লাক ফ্রাইডের মাত্র তিন মাস পর আকাশ পথে তেহরানের উদ্দেশ্যে রওনা হন আয়াতোল্লাহ। বিবিসির এক সাংবাদিক তখন আয়াতোল্লাহকে তেহরানে যেতে বারণ করেছিল, কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করেছিলেন। মাঝ আকাশে আয়াতোল্লাহর একজন মুখপাত্র জানালেন যে ইরানের বিমান বাহিনী পরিকল্পনা করছে আয়াতোল্লাহকে বহন করা বিমানটি ইরানের আকাশসীমায় ঢুকলেই সেটিকে গুলি করে নামানো হবে। সে কথা শুনে, বিমানে বিদেশী সাংবাদিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু বিমানটিতে আয়াতোল্লাহর বিপ্লবী যেসব সঙ্গী ছিলেন, তারা হাততালি দিতে শুরু করেন। কেউ কেউ আবেগে কাঁদতে শুরু করেন। তাদের বক্তব্য ছিল- শহীদ হওয়ার সুযোগ তারা পেয়েছেন। ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বিমানের প্রথম শ্রেণীতে বসে ছিলেন আয়াতোল্লাহ। সাংবাদিকরা তার কাছে গেলেন। কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের দিকে নজর না দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। একজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করলেন- এতদিন নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরতে তার কেমন লাগছে? আয়াতোল্লাহ উত্তর দেন কিছুই মনে হচ্ছেনা। বিমানটিকে গুলি করা হয়নি। কিন্তু বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে দীর্ঘ দেন-দরবার চলতে থাকার কারণে বিমানটি বেশ কিছুক্ষণ ধরে তেহরানের ওপর চক্কর খেয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত বিমনাটি নামে। এত মানুষ তাকে অভিবাদন জানাতে বিমানবন্দরে বাইরে হাজির হয়েছিল যে দেখে মনে হয়েছিল এত বড় জমায়েত বিশ্বে আর কোনোদিন কোথাও হয়নি।

এদিকে পরিবার পরিজন নিয়ে শাহ দেশ থেকে পালিয়ে যান। তার দীর্ঘদিনের মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে। তিনি প্রথমে ইটালি যান। কিন্তু ইতালি তাকে অসম্মান জনকভাবে বিদেয় করে দেয়। এরপর তার বিমান উড়াল দিলো পানামায়। সেখানকার সরকারও গ্রহণ করলো না। অনেক দেন দরবার এবং অণুনয় বিনয় করার পর মিশর তাকে সাময়িকভাবে সেই দেশে ঢোকার অনুমতি দিয়েছিলো একটি কারণে, প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে বোঝানো হলো যে- শাহের প্রথম স্ত্রী ফৌজিয়া ছিলেন মিশরের প্রয়াত এবং ক্ষমতাচ্যুত বাদশা ফারুকের বোন। এই রাজপরিবারের প্রতি তখনো মিশরের জনগণের বেশ সহানুভুতি অবশিষ্ট ছিলো। কাজেই মিশরের রাজকণ্যার স্বামী ভিক্ষুকের মতো দেশে দেশে ঘুরে বেড়াবে সেটা মিশরবাসীর জন্য হয়তো অস্বস্তিকর হয়েছিল। শাহ ফিরে এলেন কায়রোতে। ইতিমধ্যে তার শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। ফলে কায়রোর একটি হোটেলে তিনি মারা যান ১৯৮০ সালের ২৭ জুলাই- যখন তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৬০ বছর।

বিপ্লবের ফলাফল:

শাহ পাহলভীর পতনের সাথে ইরানে আড়াই হাজার বছরের শাহ রাজ বংশের পারিবারিক রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। আয়াতুল্লাহ খোমেনী ইরানের প্রাকৃতিক সম্পদ মার্কিন ও ব্রিটিশদের থেকে মুক্ত করে জাতীয়করণ করেন। এতে ইরান অর্থনৈতিক ভাবে আরো দ্রুত সচ্ছল হয়ে উঠে। তার নেতৃত্বে ইরান আধুনিক বিশ্বের শক্তিশালী মুসলিম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আয়াতুল্লাহ খোমেনী মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।এরমধ্যো দিয়ে পশ্চিমা উদারপন্থার প্রধান চ্যালেঞ্জার হয়ে পড়লো আয়াতোল্লাহ খোমেনির নতুন ইরান।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, পার্স ট্যুডে, উইকিপিডিয়া, ইরান মিরর

সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *