বর্ষা শুরু আমরা হইরই করে বেরিয়ে পরবো ঝর্ণা দেখতে।
বিশেষ করে বেশিরভাগ দূর্গম ঝর্ণাগুলোতে যাওয়ার জন্য পাহাড়ি নদী, খাল বা ঝিরিপথ ব্যবহার করতে হয়। বছরের অন্যান্য সময় খাল বা ঝিরিপথ প্রায় শুকনা থাকলেও বর্ষাকালে হয়ে উঠে পিচ্ছিল ও দূর্গম। অল্প বৃষ্টিতেই ভয়ংকর বিপদের কারণ হয়ে পারে এই ঝিরি পথ। তেমনি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের নাম ফ্লাশ ফ্লাড। বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড সহ অনেক পাহাড়ী জায়গায় ভ্রমণকারীদের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। ফলে বিভিন্ন রকম দূর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে।
এবার জেনে নিই ফ্লাশ ফ্লাড কি কেন হয় এবং হলে আমাদের কি করণীয়।
ফ্লাশ ফ্লাড কি
আপনি শুকনা ঝিরি দিয়ে হাঁঠতেছেন, আকাশ কালো হলো দূরে কিন্তু আমার আশেপাশে টিপটিপ বৃষ্টি পরতেছে, এমতাবস্থায় কিছু বুঝে উঠার আগেই শুকনা ঝিড়িতে বিপুল পরিমান পানি স্রোত আকারে বয়ে চলাকেই ফ্লাশফ্লাড বলে।
একটু আগে যে ঝিরি ছিলো শুকনা সেটে কয়েকমিনিটের ভিতর গলা সমান বা তারচেয়ে বেশী পরিমাণ গভীরতা নিয়ে হয়ে উঠবে এক খরস্রোতা নদীতে।একটু আগে যেটা ছিল পায়ে হাঁটা রাস্তা, মুহূর্তেই সেটা পরিণত হতে পারে একটা খরস্রোতা নদীতে। সেই প্রচণ্ড স্রোতে আপনাকে ভাসিয়ে নিতে পারে, স্রোতে ভেসে আসা ডালপালা,পাথর বড় গাছের কাণ্ড এসব আপনাকে আঘাত করতে পারে।
ফ্লাশ ফ্লাড কেন হয়
সাধারণত পাহাড়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়। আর সব বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পাহাড়ের গাঁ বেয়ে, ও ঝর্ণা দিয়ে একত্রে নেমে আসে এত বিশাল এরিয়ার পানি একসাথে নামার ফলে সুরু ঝিরি তে ঢলের সৃষ্টি হয়, এর হওয়ার কারণ পাহাড়ে ঝিরি ছাড়া আর পনি প্রাবাহের কোন রাস্তা নাই, তাই বিশাল এরিয়ার জলরাশি কয়েকমিনিটের ভিতর ঝিরিতে প্রবেশ করে এবং পাহাড়ী ঢলের সৃষ্টি করে।
ফ্লাশ ফ্লাড হলে বুঝবো কিভাবে
বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে আকাশে তাকাতে হবে দেখবেন দূরে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা বা আকাশ কালো।কিনা।
বৃষ্টি হচ্ছে আপনার সামনের দিক থেকে ঘোলা, পাতা সহ পানির স্রোত আসতেছে তাদেখে।
হঠাৎ করে পানির গভীরতা বেড়ে গেলে।
পানির স্রোত অনেক বেশী হলে।
ফ্লাড থেকে বাঁচার উপায়
চোখ কান খোলা রাখতে হবে।
চারপাশের অবস্থান টা ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে।
তারাহুড়া না করে সব পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
যদি বুঝেন খুব বৃষ্টি হচ্ছে তাহলে খুব দ্রুত পাহাড়ে উঠে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবেন।
প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখবেন সামনের দিকে।
সবসময় টিমমেটেদের ভিতর একতা রাখবেন।
ঝিরির ভিতর থাকাকালীন ফ্লাশ ফ্লাড হলে করণীয়
যত দ্রুত সম্ভব পাহাড়ে আশ্রয় নিবেন।
যারা সাঁতার পারে না তাদের কে সবার আগে উপরে তুলবেন।
পাহাড়ে রাস্তা খুঁজে না পেলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবেন, কারণ বৃষ্টি শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর ঢল কমে যায়।
পাহাড়ে থাকাকালীন সময় জোঁক, কাটা, সাপ এই গুলোর প্রতি নজর রাখিয়েন।
কখনোই ঝিরি তে অবস্থিত পাথর ধরে বসবেন না বা উপরে উঠবেন না।
সাথে কি নেওয়া ভালো
বর্ষা তে কোথাও গেলে সাথে দড়ি,পলিব্যাগ,ছুরি,টর্চ,লাঠি,লবন, সাথে নেওয়া ভালো। ফ্লাশ ফ্লাড শুরু হয়ে আবার কিছুক্ষণেই শেষ হয়ে যায়। এটা এত দ্রুত আসে, যে সঠিক সময়ে সতর্ক না হলে দেখা যাবে আপনি কোন দিকে ভেসে যাচ্ছেন, নিজেও বুঝতে পারবেন না।
তবে ফ্লাশ ফ্লাড জিনিসটা মারাত্মক হলেও এটার আগাম সতর্ক বার্তা পাওয়া সম্ভব একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই। আকাশ খারাপ করছে, বৃষ্টি হতে ফ্লাশ ফ্লাড নিয়ে এতটাই মারাত্মক যে এর কারণে মানুষ মারা যেতে পারে। শুকনো হাঁটু পানির ঝিরি মুহূর্তেই মাথা ছাড়িয়ে যাওয়া পানিতে পরিণত হয়। বান্দরবান,মীরসরাই এরিয়াতে বেশ কিছু ঝিরিপথে ভরা বর্ষায় ট্রেকিং করতে গিয়ে চরম বিপদে পড়েছেন অনেকে আর মারাও গেছেন বেশ কিছু মানুষ। তাই সাবধান প্রয়োজন হলে ঝিরিপথ থেকে দূরে থাকুন। আর চোখ কান খোলা রাখুন সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
আপনার যাত্রা শুভ হউক।
Leave a Reply